পাবদা গ্রামবাসীর ৪০ বছরের বঞ্চনার অবসান হোক- ভোটের মানচিত্রে অনুপস্থিত এক গ্রাম

বাংলাদেশে একটি এলাকা রয়েছে, যেখানকার মানুষ কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে ভোট দেন না, দিতে পারেন না। পৃথিবীর মানুষ চাঁদ পেরিয়ে মঙ্গল গ্রহে পর্যন্ত যাওয়ার উপক্রম করছে, অথচ বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাবদা গ্রামের মানুষ দুই মাইল দূরের ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না।


যেতে বাধা দেওয়া হয়, গেলে অপমানিত হতে হয়। বছরের পর বছর তাঁদের ভোট অন্যরা দিয়ে আসছেন।
যাতায়াতের অসুবিধা কিংবা গ্রামবাসীর অসচেতনতা নয়, পাবদা গ্রামের মানুষের ভোটদানে বাধা ক্ষমতাশালীদের দাপট। কৃষিজীবী অধ্যুষিত এই গ্রামের এক হাজার ২০০ মানুষের মধ্যে ৬৫০ জন ভোটার। স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনেও এই ভোটসংখ্যা মোটেই ফেলনা নয়। কিন্তু দশকের পর দশক যায়, তাঁদের ভোটদানের পথে বাধা দূর হয় না। সাত বছর আগে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা আবেদনপত্রও দিয়েছিলেন। সেই চিঠির উত্তর আর আসেনি। প্রশাসনের কাছে তাঁরা তাঁদের গ্রামে আলাদা ভোটকেন্দ্র করার আবেদন করেও বিফল হয়েছেন। বাংলাদেশে বহু মানুষই বিভিন্ন কারণে ভোটদানে অপারগ হয়, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ধরেও অনেককে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু একটানা ৪০ বছর একটি গ্রামের সব ভোটারকে ভোটদানে বিরত রাখা একেবারেই নজিরবিহীন।
ভোটদানের বাধা স্থানীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা, যাঁরা ভোটারদের ছাড়াই ভোট আদায়ের জারিজুরি জানেন। কিন্তু দিনের পর দিন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় শাখা ব্যাপারটিকে উপেক্ষা করে গেল কীভাবে? গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের পরীক্ষায় এ ক্ষেত্রে সবাই ফেল, পাস কেবল সেই গ্রামের মানুষ; তাঁরা তো দিনের পর দিন এ ব্যাপারে দেনদরবার করে এসেছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানেই এ রকম কিছু পকেট থেকে যেতে পারে, যেখানে ভোটার তালিকায় অনিয়ম ও ভোটদানের পরিবেশ যথাযথ নয়। আমরা আশা করব, কেবল পাবদা গ্রামই নয়, এ ধরনের সব অনিয়মকে আমলে নেওয়া হবে এবং দ্রুতই প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.