ব্যাংকিং- হলমার্ক কেলেঙ্কারি: হিমশৈলের শৃঙ্গমাত্র? by ফারুক মঈনউদ্দীন

আমাদের দেশে মাঝেমধ্যে এমন সব ঘটনা ঘটে, তা বিশ্বাস হতে চায় না। রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রের এসব তোলপাড় করা ঘটনা নিয়ে আমাদের সংবাদমাধ্যমে, টেলিভিশনের টক শোতে খুব আলোচনা হয়, কিছুদিন একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে কর্তৃপক্ষের তরফেও। তারপর সবকিছু হারিয়ে যায় বিস্মৃতির গভীরে।


তোলপাড় করা ঘটনাগুলোকে আইন আর বিচারের মারপ্যাঁচে ফেলে লঘু করে ফেলা হয়, কখনো বা সুকৌশলে পার পেয়ে যেতে দেওয়া হয় ঘটনার মূল হোতাদের। এসবই হয় ঘটনার ঘনঘটা যখন থিতিয়ে এসে সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়, তখন। কেবল সরকারের সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার থাকলেই এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়।
সাম্প্রতিক কালে ব্যাংকিং খাতে অবিশ্বাস্য যে ঘটনাটি উদ্ঘাটিত হলো, সেটি সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে গোটা জাতি জেনে গেছে। সোনালী ব্যাংকের একটিমাত্র শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হরিলুটের ঘটনায় ব্যাংকিং মহল স্তম্ভিত। আরও বিস্ময়ের বিষয়, আত্মসাৎ করা এই বিপুল অঙ্কের মধ্যে একটিমাত্র অখ্যাত কোম্পানিই নিয়ে গেছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে (মে, ২০১২) প্রথম আলোতেই প্রথমবারের মতো হলমার্ক নামের প্রতিষ্ঠানটির ঋণ কারসাজি এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি যে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন (?) প্রতিষ্ঠান এবং সেটির কর্ণধারকে যে কেউই আগে থেকে চিনতেন না, সেটি যেন ছিল ঋণ বিপণনে নিয়োজিত ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য লজ্জার বিষয়। শাখাটিতে যে ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ লুটে নেওয়া হয়েছে, সেটি সোনালী ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অগোচরে সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। জানা গেছে যে ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বড় শাখার আলোচ্য বিষয় ছিল, অথচ কোনো এক কারণে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।
আমাদের দেশে এ-জাতীয় ঘটনা নীরবে বা প্রকাশ্যে ঘটে যেতে থাকে এবং একসময় সেটি বিস্ফোরিত হলে কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় ঘটে। ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেডের (আইটিসিএল) অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসা, হুন্ডি কাজলের জালিয়াতি, যুবকের প্রশ্নবিদ্ধ আমানত সংগ্রহ, ইউনিপেটুর অবৈধ কার্যক্রম কিংবা ডেসটিনির রহস্যময় ব্যবসা—এ-জাতীয় ঘটনা একের পর এক ঘটে গেছে—এগুলোর কোনোটিই যে কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি, সেটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এসব রহস্যজনক প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ও কারসাজির কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হয়, তত দিন কেউ-ই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসে না। এই নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ দেয় চরম দায়িত্বহীনতার। সর্বশেষ ঘটনায় হলমার্কের ব্যাপারেও ঠিক তেমনটিই বলা যায়।
হলমার্ক যে কায়দায় সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে, তার পদ্ধতিটা ব্যাখ্যা করলে জালিয়াতির বিষয়টা সাধারণ পাঠকের কাছে স্পষ্ট হবে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ সরানোর একটা খুব সহজ পদ্ধতি এখানে অনুসরণ করা হয়েছে, যেটি ব্যাংকিং কার্যক্রমের একটা স্বীকৃত এবং নিরাপদ লেনদেনব্যবস্থা। কিন্তু এর অপব্যবহার করে আবার খুব সহজেই ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেওয়া যায়, যদি ব্যাংকের তরফে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া না হয়, কিংবা যদি সহায়তা করা হয়। ধরা যাক, হলমার্ক তার কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা সরাতে চায়। সে ক্ষেত্রে হলমার্ক সেই প্রতিষ্ঠান, যেমন এখানে, ম্যাক্স স্পিনিং মিলের অনুকূলে কোনো পণ্যের (হলমার্ক যদি বস্ত্রবয়নকারী প্রতিষ্ঠান হয়, তা হলে পণ্যটি হবে ইয়ার্ন বা সুতা) ঋণপত্র বা এলসি খুলবে। ম্যাক্স স্পিনিং হলমার্ককে সুতা সরবরাহ করেছে তার প্রমাণস্বরূপ ইনভয়েস, ট্রাক রিসিট (এসবই হবে জাল), বিল অব এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি তার ব্যাংকের মাধ্যমে হলমার্কের ব্যাংকে (এখানে সোনালী ব্যাংক) পাঠাবে। সোনালী ব্যাংক হলমার্কের কাছ থেকে সেই বিলের গ্রহণযোগ্যতা (অ্যাকসেপট্যান্স) আদায় করে ম্যাক্সের ব্যাংকের কাছে বিল পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে একটা চিঠি দেবে, যাতে সেই বিলের গ্রহণযোগ্যতা তথা নির্ধারিত তারিখে বিল পরিশোধ করার নিশ্চয়তা থাকে। সেই অ্যাকসেপট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে ম্যাক্সের ব্যাংক বিলটি কিনে নিয়ে ম্যাক্সকে টাকা দিয়ে দেয়। এই কিনে নেওয়াটা হচ্ছে একধরনের ঋণেরই নামান্তর, ব্যাংকিং পরিভাষায় যাকে বলে বিল ডিসকাউন্টিং।
ব্যাংকের ভাষায় এ-জাতীয় ডকুমেন্টারি বিল আদায়ের পদ্ধতিকে বলা হয় ডকুমেন্টারি কালেকশন, যা দিয়ে আমদানিকারকের কাছ থেকে রপ্তানিকারক তার ব্যাংকের মাধ্যমে তার বিক্রিলব্ধ পণ্যের মূল্য আদায় করে। এই মূল্য আদায়ের জন্য দুই ধরনের বিল ব্যবহূত হয়: একটি তাৎক্ষণিক পরিশোধযোগ্য বিল (সাইট বিল), আরেকটি পরবর্তী সময়ে পরিশোধযোগ্য বিল (ইউজেন্স বিল), যেটি আমদানিকারক কর্তৃক বিল গ্রহণযোগ্যতার সম্মতির একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর (৩০ দিন থেকে ১৮০ দিন) পরিশোধ করতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি তার গ্রাহক তথা আমদানিকারকের পক্ষে কোনো পণ্য কেনার জন্য পরবর্তী সময়ে বা দূর-পরিশোধযোগ্য (ডেফার্ড) এলসি খোলে এবং সেই এলসিতে উল্লিখিত সব শর্ত পালন করে রপ্তানিকারক পণ্য সরবরাহ করে আমদানিকারকের ব্যাংকে বিল পাঠায় এবং আমদানিকারকের ব্যাংক যদি সেই বিলের মূল্য পরিশোধে সম্মতি জ্ঞাপন করে, তা হলে সেটি হয়ে দাঁড়ায় মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তার বিষয়টি পরিপালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের প্রকাশনার অধীনে ইউনিফর্ম রুলস ফর কালেকশন ৫২২-এর নীতিমালার মাধ্যমে।
এখানে উল্লেখ্য, ঋণপত্র বা এলসি ছাড়াও ক্রয় করা পণ্যের বিলের বিপরীতে আমদানিকারকের ব্যাংক বিল পরিশোধের সম্মতি দিতে পারে, তবে সেটি পরিশোধের নিশ্চয়তা বলে গণ্য হয় না। তাই এলসির বিপরীতে আমদানিকারকের ব্যাংকের এই সম্মতি তথা নিশ্চয়তাপত্র রপ্তানিকারকের অনুকূলে ঋণসুবিধার প্রধানতম নিয়ামক বা জামানত হিসেবে গণ্য হয়। কারণ, আমদানিকারকের পক্ষে তার ব্যাংক যে সম্মতিপত্র দেয়, সেটি সেই ব্যাংকের দায় হিসেবে পরিগণিত হয়। ফলে রপ্তানিকারকের ব্যাংক নির্দ্বিধায় সম্মতি প্রদানকারী ব্যাংকের সুনাম ও সামর্থ্যের ওপর ঝুঁকি গ্রহণ করে রপ্তানিকারককে ঋণসুবিধা দিয়ে দেয়। ব্যাংকের প্রতি ব্যাংকের এই নিশ্চয়তা এবং নির্ভরতা বিশ্বব্যাপী পরস্পরের অপরিচিত আমদানি ও রপ্তানিকারকের মধ্যকার লেনদেনকে সহজতর ও উন্মুক্ত করেছে। এই বিল ব্যবস্থা এতখানি নিরাপদ বলে ভাবা হয় যে উন্নত বিশ্বে আমদানিকারকের ব্যাংকের সম্মতিপ্রাপ্ত বা গৃহীত বিল কিনে নিয়ে বা বাট্টা (ডিসকাউন্ট) করে রপ্তানিকারককে বিলের টাকা পরিশোধ করার পর রপ্তানিকারকের ব্যাংক চাইলে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে সেই বিল আবার বাট্টাকৃত দামে বিক্রি করে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহূত আমদানি-রপ্তানির জন্য দূর-পরিশোধযোগ্য এলসির বিপরীতে বিলের মাধ্যমে ব্যাংকের সম্মতির বলে দেওয়া ঋণসুবিধার এই পদ্ধতিটি অভ্যন্তরীণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহূত হয়ে থাকে। পদ্ধতিটি একই, কেবল পার্থক্য এটুকু যে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই একই দেশের নাগরিক। এমনকি কখনো দুটি প্রতিষ্ঠান একই গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকানাধীনও হতে পারে। গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান যদি পোশাক তৈরি করে এবং সেই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠান যদি কাপড় তৈরি করে, তা হলে প্রথম প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ রকম দূর-পরিশোধযোগ্য এলসির মাধ্যমে কাপড় কিনতে পারে এবং দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক প্রথম প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকের সম্মতিপত্রের বলে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দিতে পারে। এমনকি দুটো প্রতিষ্ঠান যদি একই ব্যাংকের গ্রাহক হয়, সে ক্ষেত্রেও একই ব্যাংক প্রথমটির পক্ষ হয়ে দ্বিতীয়টিকে সম্মতিপত্র দিতে পারে এবং তার বিপরীতে দ্বিতীয়টিকে ঋণসুবিধাও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটি দ্বিতীয় কোনো ব্যাংকের ওপর ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ পায় না, তাকে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয় প্রথম প্রতিষ্ঠানটির ওপর। অভ্যন্তরীণ ঋণপত্র এবং দূর-পরিশোধযোগ্য বিলের বিপরীতে ঋণসুবিধা প্রদানও একটা স্বীকৃত ও নিরাপদ ব্যবস্থা। ভারতে একসময় (২০০২ সাল পর্যন্ত) কোনো ব্যাংক দ্বিতীয় ব্যাংকের ঋণপত্রের বিপরীতে সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে নিজের গ্রাহক নয় এমন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলেও ঋণ বা বাট্টাসুবিধা প্রদান করতে পারত। পরবর্তী সময়ে এই ব্যবস্থার অপব্যবহারের আশঙ্কায় অগ্রাহকের জন্য এই সুবিধা রহিত করা হয়।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ের এ ব্যবস্থার অপব্যবহার করেই হলমার্ক অর্থ আত্মসাতের কাজটি করেছে। এই পদ্ধতিতে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কোনো ধরনের পণ্য লেনদেন ঘটে না, লেনদেন ঘটে কেবল কিছু ভুয়া দলিলপত্রের। হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার অস্তিত্বহীন লেনদেনগুলো ঘটেছে একই ব্যাংকের (সোনালী ব্যাংক) মাধ্যমে এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে আমদানিকারকের ব্যাংক ছিল সব ক্ষেত্রেই সোনালী ব্যাংক, রূপসী বাংলা শাখা। এই বিশাল কারসাজিতে কারা কারা জড়িত ছিলেন, সেটি আপাতদৃষ্টিতে সবার কাছে পরিষ্কার। কিন্তু আরেকটি বিষয় এই ডামাডোলে সবারই দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিক যখন আস্ফাালন করে বলেন যে সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ২০ গুণ বেশি সম্পদ তাঁর রয়েছে, এই বিপুল সম্পদ আহরণের উৎসের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবেই আয়কর কর্তৃপক্ষ এবং দুদকের নতুন তদন্তের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আজ হলমার্ক কেলেঙ্কারি সবার চোখ খুলে দিয়েছে বটে, কিন্তু দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ঠিক একইভাবে এই বিল ব্যবসার মাধ্যমে আরও বহুগুণ অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যদিও সেসব হয়তো চক্রাকারে ঘুরছে বলে (অর্থাৎ একটি বিল ডিসকাউন্টিংয়ের টাকা দিয়ে আরেকটি পরিশোধ) বিষয়টির অন্যায্যতা ধরা পড়ছে না। একটা বৈদ্যুতিক পাখা যখন সচল থাকে, তাতে কয়টি ব্লেড থাকে বোঝা যায় না, পাখাটি থামার পরই বোঝা যায় কয়টি ব্লেড আছে—ব্যাপারটা সে রকমই। আমদানিকারকের ব্যাংকের সম্মতিপত্রে দেওয়া নির্ধারিত তারিখে পাওনা শোধ না করার সংস্কৃতি এখানে জোরদার বলেই এই সুবিধার অপব্যবহারের সুযোগ ঘটে। অথচ এভাবে ভুয়া বিল দিয়ে অর্থ তুলে নেওয়ার এই দৌরাত্ম্য মানি লন্ডারিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলের সম্মতি জ্ঞাপনের আগে ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে পণ্য নিরীক্ষার নিয়ম প্রবর্তন করেছে। এটি একদিকে যেমন ইউসিপিডিসির নিয়মের ব্যত্যয় (কারণ, ব্যাংক পণ্য নিয়ে কারবার করে না, তার কারবার কেবল ডকুমেন্ট নিয়ে), অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের অসৎ কার্যকলাপের দায়ভার বহনের বিপদে পড়তে হতে পারে ব্যাংকের নিরীক্ষাকারী কর্মকর্তাকে। কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যাংক যদি নির্ধারিত তারিখে গৃহীত (অ্যাকসেপ্টেড) বিলের পাওনা পরিশোধ না করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করে, তা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বিকলন (ডেবিট) করে পাওনা টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করবে—বাংলাদেশ ব্যাংকের এ রকম একটা সার্কুলার আছে। অথচ তবু নিশ্চয়তা জ্ঞাপন করা বিলগুলো সময়মতো পরিশোধ করার ব্যাপারে (বিশেষ করে সরকারি) ব্যাংকগুলোর আদৌ গরজ নেই। তবে হলমার্ক কায়দায় যদি এমন ফ্রিস্টাইলে কাজ করা হয়, সেগুলো ব্যাংক কর্মকর্তারা বিচক্ষণতা দিয়ে রোধ করতে পারেন সহজেই।
সোনালী ব্যাংকের নজিরবিহীন ঘটনার পর সরকারের উচ্চতর মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিতরণ করা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে চার হাজার কোটি টাকার এ-জাতীয় ঘটনা নাকি কোনো বড় ঘটনা নয়। এই দাবিকে আপাত সঠিক বলে ধরে নিলে কি এ কথা বলা যায় যে হলমার্ক কেলেঙ্কারি আসলে ভাসমান হিমশৈলের একটা ছোট্ট শৃঙ্গমাত্র, যার নিচে আছে হিমশৈলটির বিশাল বিস্তার?
ফারুক মঈনউদ্দীন: লেখক ও ব্যাংকার।
fmainuddin@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.