অভাবের তাড়না-বাগেরহাটে দুই মেয়েকে চুবিয়ে মারলেন বাবা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে অভাবের তাড়নায় দুই মেয়েকে ঘেরের পানিতে চুবিয়ে মারলেন অসহায় এক বাবা। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার হিজলা মাঠপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দুই বোনের লাশ উদ্ধার এবং পাষণ্ড বাবাকে আটক করেছে।


অভাবের তাড়না এবং পারিবারিক অশান্তির কারণে দুই শিশুকন্যা নিশামনি (৭) ও তিষামনিকে (৫) হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বেকার ও পঙ্গু শাহ আলম কাজী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শাহ আলম মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর গ্রামের মো. জিন্নাত কাজীর ছেলে।
শাহ আলমের স্ত্রী জেরিন আক্তার রূপা জানান, ২০০৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কোনো চাকরি না পেয়ে তাঁর স্বামী নছিমন চালাতেন। কিন্তু বছর তিনেক আগে দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়ে পঙ্গু হন শাহ আলম। এরপর থেকে তিনি বেকারই আছেন। অভাবের তাড়নায় দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চিতলমারীর হিজলা গ্রামে চলে আসেন রূপা। গত রবিবার শাহ আলম ওই বাড়িতে এসে তাঁকে (স্ত্রী) ও দুই মেয়েকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কিভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে রবিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। গতকাল সকালে দুই মেয়ে নিশা ও তিষাকে গোসল করানোর কথা বলে বাড়ির পাশের ঘেরে নিয়ে যান শাহ আলম। সকাল থেকে দুপুর হলেও বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাদের খুঁজতে বের হয়। পরে ঘেরের পানিতে দুই মেয়ের লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। 'সে (শাহ আলম) আমার জীবনের সব কিছুই শেষ করে দিয়েছে। আমার আর কিছুই রইল না'- বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রূপা।
শাহ আলমের শ্বশুর আজিজুল হক মল্লিক বলেন, জামাতা শাহ আলম ঠিকমতো কাজকর্ম না করায় সংসারে সব সময়ই অভাব-অনটন ও অশান্তি লেগে থাকত। গতকাল সকালে শাহ আলম তাঁর কাছে বিদেশে যাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি চিংড়ি মাছ বিক্রি করে পরে টাকা দেওয়ার কথা বললে জামাতা উত্তেজিত হয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যান।
পুলিশের হাতে আটক শাহ আলম দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, অভাবের তাড়নায় ও স্ত্রী-মেয়ের মুখে দুবেলা-দুমুঠো খাবার দিতে না পারার মানসিক যন্ত্রণায় তিনি এ কাজ করেছেন। এতে তাঁর জেল বা ফাঁসি হলেও তা মেনে নেবেন।
চিতলমারী থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকাবাসী ঘাতক বাবা শাহ আলমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এর আগে কুষ্টিয়ায় ঈদে নতুন জামাকাপড় দিতে না পারায় দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন এক বাবা। লোকজন বাবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও বাঁচানো যায়নি দুই ছেলে-মেয়েকে।

No comments

Powered by Blogger.