জবানবন্দিতে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী- আলবদরের নেতৃত্বে ছিলেন নিজামী

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মিছবাহুর রহমান চৌধুরী জবানবন্দিতে বলেছেন, একাত্তরে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। সে সময় তাঁকে পাঠানো চিঠিতে লেখা ছিল, আলবদর বাহিনীতে যোগ দিলে ছাত্র সংঘের সভাপতি নিজামী ভাই (মতিউর রহমান নিজামী) খুশি হবেন।


ছাত্র সংঘের কর্মীদের দিয়ে গঠিত আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল রোববার তিনি জবানবন্দি দেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মীর ইকবাল হোসেন তাঁর জবানবন্দি নেন।
জবানবন্দিতে মিছবাহুর রহমান (৫৭) বলেন, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তিনি মৌলভীবাজার ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মতলবির ডাকে পাকিস্তান শাহী ফৌজ ও ছাত্র সংঘের সদস্যপদ নেন। পরে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল কলিজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ইসলামী সংগঠন হিসেবে ছাত্র সংঘ এর বিরোধিতা করবে। আগস্ট মাসে সিরাজুল ইসলাম মতলবি তাঁর মৌলভীবাজারের বাড়িতে দুদিন যান। তাঁকে না পেয়ে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে বলা হয়, ছাত্র সংঘ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১০ আগস্টের মধ্যে ছাত্র সংঘের সব কর্মী আলবদর বাহিনীতে যোগ দেবেন। তাঁকেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মৌলভীবাজারের কমান্ডার মেজর ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে নিয়োগপত্র নিয়ে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, আলবদর বাহিনীতে যোগ দিলে নিজামী ভাই (ছাত্র সংঘের তৎকালীন সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী) ব্যক্তিগতভাবে খুশি হবেন। ওই চিঠি দেখে তাঁর বাবা অসন্তুষ্ট হন ও তাঁকে লন্ডন পাঠিয়ে দেন।
এ সময় মীর ইকবাল হোসেন ওই চিঠির অনুলিপি সাক্ষীকে দেখিয়ে জানতে চান, এটিই সেই চিঠি কি না? সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ।
পরে মিছবাহুর রহমান বলেন, লন্ডনে যাওয়ার দুই মাসের মধ্যে মায়ের অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে ফেরেন ও চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত দেশেই ছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লন্ডনের বাকিংহাম কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ‘মুসলিম স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’ নামের সংগঠনের সদস্য থাকাকালে তৎকালীন সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে তিনি সৌদি আরব গিয়ে গোলাম আযমকে (জামায়াতের সাবেক আমির) দেখেন। বাদশার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দেন, তিনি তার বিরোধিতা করেন।
মিছবাহুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, সৌদি আরব থেকে লন্ডন ফেরার পর ছাত্র সংঘের নেতা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। রাজ্জাকের আমন্ত্রণে এক সভায় গিয়ে তিনি মিয়া তোফায়েল, চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আবদুল আজিজকে দেখেন। ওই সভায় রাজ্জাকের বক্তব্য থেকে তিনি জানতে পারেন, রাজ্জাক আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। একাত্তরের ডিসেম্বরের পর তিনি ভারত থেকে নেপাল ও পাকিস্তান হয়ে লন্ডন যান।
প্রায় আড়াই ঘণ্টার জবানবন্দি শেষে মিছবাহুর রহমানকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। বিকেলে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় এই মামলার কার্যক্রম ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
পরে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭৪ সালে লন্ডনে একটি বৈঠকে আমি আলবদরের সদস্য ছিলাম মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়েছি এবং নেপাল ও অন্যান্য দেশ হয়ে লন্ডনে গিয়েছি বলে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মিছবাহুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে সাক্ষী আমার নামও উল্লেখ করেননি। অতীতে তিনি আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিলে আমি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

No comments

Powered by Blogger.