থ্যালাসেমিয়া রোগে মুখের সমস্যা

থ্যালাসেমিয়া একটি জীনবাহিত বংশগত রোগ। বাবা মায়ের কাছ থেকে এ রোগ সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের জীন বহন করছে এবং শতকরা চার ভাগ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত যাদের প্রতি মাসে রক্ত নিতে হয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগে এক বা একাধিক গ্লোবিন চেইনের সিনথেসিস বা সংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায় এবং রোগীর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া মেজর এ মারাত্মক রক্তস্বল্পতা, লিভার ও প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া এবং হাড়ের অসামঞ্জস্যতা দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত শিশুদের মাঝে ফলিক এ্যাসিডের অভাব দেখা যায়। এছাড়া কার্ডিওমায়োপ্যাথিও দেখা যেতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগে মাইক্রোসাইটিক হাইপোক্রমিক এনিমিয়া দেখা যায়।
বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায় যা হৃদপি-, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, ত্বক এবং লালাগ্রুন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যা সিক্কা সিনড্রোম নামে অভিহিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যকৃত ও অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে থাকে। বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রক্ত নিতে হয় এবং ফলিক এ্যাসিড সম্পূরক হিসাবে প্রদান করতে হয়। আয়রন চিলেটিং এজেন্ট দ্বারা অতিরিক্ত আয়রনের চিকিৎসা করা হয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগে উপরের চোয়াল বা ম্যাক্সিলা বড় হয়ে যেতে পারে। বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জার সম্প্রসারণের কারণে এমনটি হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগে মাঝে মাঝে দাঁত ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। উপরের চোয়ালের ইনছিসর দাঁত সামনের দিকে প্রসারিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থোডনটিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। প্যারোটিড গ্রন্থির ব্যথাযুক্ত ফোলাভাব হতে পারে। আয়রন জমা হওয়ার কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ফলিক এ্যাসিডের অভাবজনিত কারণে বার্নিং মাউথ বা মুখ জ্বালাপোড়া হতে পারে। শুষ্ক মুখের কারণে লালার নিঃসরণ কমে যাওয়ায় দন্তক্ষয় থেকে শুরু করে মুখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগে সবার সচেতন হতে হবে এবং এ রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে কোন অবহেলা না করে।

No comments

Powered by Blogger.