ঢাকা ও ফুলবাড়ীতে কর্মসূচি- ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দাবি

ফুলবাড়ী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বর্তমান সরকার ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না করে বিএনপি সরকারের পথেই হাঁটছেন। অথচ ফুলবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন না করার পরিণাম হবে ভয়াবহ।’


এ ছাড়া দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ীর অফিস প্রত্যাহারসহ ছয় দফার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী বছরের শুরু থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
২০০৬ সালের এই দিনে ফুলবাড়ীতে বহুজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জির উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার পরিকল্পনার প্রতিবাদে জনতার কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হয়। এরপর থেকে দিবসটিকে ‘ফুলবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে সরকারের ছয় দফা সমঝোতা হয়। যেটি পরিচিতি পায় ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ নামে।
গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জাতীয় কমিটির উদ্যোগে সমাবেশের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়া হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের দক্ষতায় নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলেও সরকার নতুন করে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে গ্যাসসম্পদ লুটপাটের আয়োজন করতে চাইছে। কোনো উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করে বক্তারা বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও যন্ত্রপাতি এনে শতভাগ মালিকানায় সম্পদের ওপর দেশের নিয়ন্ত্রণ রাখার দাবি জানান।
বক্তারা জাতীয় স্বার্থে কয়লানীতি চূড়ান্ত করে মানুষ-জমি-পানি-জলার কম ক্ষতিতে কয়লা উত্তোলন করে তা ব্যবহারেরও দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাতীয় কমিটির সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সাইফুল হক। অনুষ্ঠানে আনিসুর রহমান মল্লিক, সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বজলুর রশিদ ফিরোজ, আবদুস সালাম, মোশরেফা মিশুসহ জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা নগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহীদ মিনার থেকে হাইকোর্টের মোড়, তোপখানা রোড, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, গতকাল জাতীয় কমিটি ও খনি এলাকার অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন আলাদাভাবে ‘ফুলবাড়ী দিবস’ পালন করেছে।
সমাবেশে সভাপতি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ীর অফিস প্রত্যাহারসহ ছয় দফার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী বছরের শুরু থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ওয়ার্কার্স পাটির পলিট ব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (খালেক) কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক, বাসদ (মাহবুব) কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতারা।
দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল থেকে খনি এলাকার মানুষ খনিবিরোধী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের ঢাকা মোড়, টিটিইর মোড় ও ব্যবসায়ী সমিতি চত্বরে জড়ো হয়। এরপর সকাল সোয়া ১০টায় পেশাজীবী সংগঠন এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি শহরে গণমিছিল বের করে। কর্মসূচিকে ঘিরে আধা বেলা দোকান-পাট বন্ধ রাখা হয়। সকাল নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুর-রংপুর-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

No comments

Powered by Blogger.