বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বেতন-ভাতা বন্ধ by সাইফুর রহমান

বরিশাল নগরের জগদীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে দুই নেতার দ্বন্দ্বে কয়েক মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এমনকি তাঁরা ঈদের বোনাসও তুলতে পারেননি। একই কারণে ছয় মাস ধরে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো জগদীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে এক হাজার ৪০০ ছাত্রী পড়ালেখা করছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ গঠন নিয়ে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. নিজামুল ইসলামের বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধান অনুযায়ী নির্বাহী কমিটিতে অসঙ্গতি থাকা ও আইনগতভাবে কমিটি গঠন না করায় ওই কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিদ্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ড ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়ার পর উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন আনোয়ার হোসেন। আদালত গত ৭ মার্চ থেকে চার মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। ওই সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হতো জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে। পরবর্তী সময় আনোয়ার হোসেন আদালত অবমাননার অভিযোগে পৃথক রিট করেন; একই সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের নামে উকিল নোটিশ পাঠান। এ কারণে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেতন-ভাতার কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। গত জুলাই মাসে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে পরবর্তী ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ান আদালত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো, আবু ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় গত জুন মাস থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারেননি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে আগামী ছয় মাস বেতন-ভাতা উত্তোলন করা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। সহকারী শিক্ষক শংকর প্রসাদ মণ্ডল বলেন, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধান অনুযায়ী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বেতন-ভাতার ভাউচারে স্বাক্ষর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি আদালতে রিটের অজুহাত দেখিয়ে স্বাক্ষর না দেওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না।
আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ থাকে ছয় মাস। সেখানে আদালত ১০ মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ওই কমিটির বৈধতাই নেই; আর তাঁর কমিটির মেয়াদ তিন বছরের হওয়ায় সেটিই এখন বৈধ। শিক্ষকদের বেতন উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমার কাছে না এসে শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলন করায় আমি আদালত অবমাননার মামলা করেছি। সে কারণে বিল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার কাছে না এসে অন্য জায়গায় গেলে বেতন-ভাতা পাবে কীভাবে।’
নিজামুল ইসলাম বলেন, আনোয়ার হোসেন বিদ্যালয়টিকে ধ্বংস করার জন্য একের পর এক মামলা করে যাচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিকে বাঁচাতে চান তিনি। সে ক্ষেত্রে তাঁকে বাদ দিলেও তাঁর কোনো আপত্তি থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.