রিমিকে নির্বাচিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী- নিজ হাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তুলে দিলেন শেখ হাসিনা

গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির হাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রিমির পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাপাসিয়ার মাটি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিবিজড়িত।


তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে সবাইকে সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে কাজ করে তাঁকে নির্বাচিত করতে হবে।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে কাপাসিয়া ও গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ডেকে এনে তাদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। পরে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে সিমিন হোসেন রিমির হাতে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে দেন।
মনোনয়ন পেয়ে আবেগাপ্লুত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর এই কন্যা সবার কাছে দোয়া চান এবং বিজয় নিশ্চিত করতে তাঁর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। নির্বাচিত হলে কাপাসিয়াবাসীর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন বলে আশ্বাস দেন।
এদিকে সকল জল্পনাকল্পনা শেষে সিমিন হোসেন রিমি শুধু আওয়ামী লীগের নয়, মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন। জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা আলাদা কোন প্রার্থী দেবে না। বিএনপি আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা এ উপ-নির্বাচনে অংশ নেবে না। একমাত্র সিপিবি ও বাসদ গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদলকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে সিমিন হোসেন রিমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর ছোট ভাই সোহেল তাজের ছেড়ে দেয়া আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর নেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিবিজড়িত গওয়ায় এই সিটির নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিচ্ছে এমন মন্তব্য করে বলেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিমিন হোসেন রিমির জন্য কাজ করে তাঁকে বিজয়ী করতে হবে।
সোহেল তাজ পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, কাপাসিয়া উপনির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমিকে প্রার্থী করার জন্য আমি, আমার বোন শেখ রেহানা, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, জোহরা তাজের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছি। গাজীপুর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমি রিমিকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম।
তাজউদ্দীনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাজউদ্দীন সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হবার পর বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ৬৯-এ মুক্তি পাবার পর রাজনীতি বন্ধ ছিল। তখন বঙ্গবন্ধু কিছুদিনের জন্য আলফা ইন্স্যুরেন্স চাকরী নেন। তখনও বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনের পাশে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেখানে গেছেন সেখানেই তাজউদ্দীনকে নিয়ে গেছেন। ‘অফিসে যাবার সময় বঙ্গবন্ধু নিজে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে তাজউদ্দীনকে তুলে নিয়ে পরে আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যেতেন।’
বর্তমান সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এবার রোজা ও ঈদে দ্রব্যমূল্য কম ছিল। একদিকে আমরা বেতন বাড়িয়েছি, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য কমিয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশেরর ইতিহাসে রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য কমে এটা কেউ দেখেনি কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্য কম ছিল।
সরকারের সফলতা বর্ননা করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামে গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়ছে। সাড়ে চার লাখ বেকার যুবককে চাকরি দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট নেয়া হয়েছে, ফলে গ্রামের মানুষ দেশে-বিদেশে যোগাযোগ করতে পারছে। ঈদের আগে এক কোটি গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।
অনুষ্ঠানে সিমিন হোসেন রিমি সকলের কাছে দোয়া ও শুভ কামনা চেয়ে বলেন, “আমি চাইÑ আপনারা আমার জন্য কাজ করেন। আমি আপনাদের কর্মী হিসাবে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ সেবক হিসাবে কাজ করতে চাই।” প্রধানমন্ত্রী যখন রিমির হাতে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে দেন তখন বিশাল হলরুমে উপস্থিত নির্বাচনী এলাকার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে হাততালি এবং সেøাগান দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। মনোনয়নপত্র তুলে দেয়ার সময় সেখানে আর উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের আরেক মেয়ে মেহজাবিন আহমদ মিমি।
নির্বাচনী পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ঘরে ঘরে গিয়ে সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে প্রচার চালানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র হতে পারে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র হয় দাবি করে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভাল হয়।
রিমির দলীয় সদস্যপদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে রাইত ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন সিমিন হোসেন রিমি। নির্বাচনে তাঁর দলীয় মনোনয়নে যা যা করা দরকার তার সব করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, গাজীপুরের নেতাদের মধ্যে আকম মোজাম্মেল হক এবং সিমিন হোসেন রিমি বক্তব্য রাখেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রবীণ নেতা এ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, দফতর সম্পাদক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমদ, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আকতারুজ্জামান, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, কেন্দ্রীয় উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান আজমতউল্লাহ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

তাজউদ্দীনের ভাই ও কন্যাসহ ৭ জনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ
নিজস্ব সংবাদদাতা গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের উপনির্বাচনে সোমবার বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা ও সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি এবং তাজউদ্দীনের ছোট ভাই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহম্মদ খানসহ ৭ জন নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম ও ভোটার তালিকা সংগ্রহ করেছেন।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্র্নিং অফিসার মোঃ হাসানুজ্জামান জানান, সোমবার দুপুরের পর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা ও সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক দীপক মজুমদার খোকন এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে তাজউদ্দীনের ছোট ভাই সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহম্মদ খানের পক্ষে কুতুবুল আলম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের নেতা আব্দুর রশিদ সরকারের পক্ষে মোঃ লুৎফর রহমান, মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আলমগীর হোসেন আকন্দের পক্ষে ইব্রাহিম, মীর এনায়েত হোসেন এবং মোঃ রাফিউল বারী মনোনয়ন ফরম ও ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত প্রার্থী গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদল মনোনয়ন ফরম ও ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে তফসিল ষোষণার পর রিটার্নিং অফিসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, বিলবোর্ড, ব্যানারসহ সব ধরনের প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দিলেও কোন প্রার্থীই সে নির্দেশ পালন করেননি। তবে থানা পুলিশের উদ্যোগে সোমবার সারাদিনই উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ও স্থান থেকে প্রচারসামগ্রী অপসারণের কাজ করতে দেখা গেছে। কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা গাজীপুর থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে তাদের বলা হয় কাপাসিয়ায় সব পাবেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কাপাসিয়ায় অনেক কাগজপত্র এসে পৌঁছেনি। নির্বাচনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দ্রুত জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.