বিশ্লেষণ- অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে কী ভূমিকা অস্ট্রেলিয়ার?

লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ঢুকে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের হুমকির জের ধরে যুক্তরাজ্য ও ইকুয়েডরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থা অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) ওয়াশিংটনে বৈঠক করে।


বৈঠকে উপস্থিত যুক্তরাজ্যের এক প্রতিনিধি ইকুয়েডরের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরুর আগ্রহ ব্যক্ত করায় উত্তেজনা আপাতত হ্রাস পেয়েছে।
যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কূটনৈতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে দূতাবাসে ঢুকে সেখানে আশ্রয় নেওয়া অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করবে না লন্ডনের পুলিশ। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত যুক্তরাজ্য। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও ইকুয়েডর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো পাতিনো বলেছেন, এই বিশ্ব কোনো জঙ্গল নয়। এখানে কোনো জংলি শাসন চলতে পারে না। আজকের বিশ্ব শাসন করবেন সভ্য শাসকেরা। এ লক্ষ্যে শাসকদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে।
অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আপাত পিছু হটার ঘটনা কি ইকুয়েডরের জন্য সুংসবাদ বয়ে আনছে? মোটেও নয়। ওএএসের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে যে দেশটি কূটনৈতিক রীতিনীতি মানার পক্ষে। এ ছাড়া সংস্থাটি দুই পক্ষকেই ‘আলোচনায়’ বসার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের হুমকি প্রত্যাহারের ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া। তবে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের বিষয়ে আগের অবস্থানে এখনো অনড় তিনি।
অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, সুইডেন পাঠানো হলে পরে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। আর তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রহসনমূলক বিচারের নামে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবে। এই আশঙ্কায় প্রায় দুই মাস আগে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন। পরে ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে দেশটি তা মঞ্জুর করে।
অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে ইকুয়েডরের অবস্থান পরিষ্কার। দেশটি বলে আসছে, তারাও চায় অ্যাসাঞ্জের বিচার হোক। তবে তাঁকে কোনো অবস্থায়ই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না। যুক্তরাজ্য ও সুইডেনকে এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
অ্যাসাঞ্জ ন্যায়বিচার পান, যেন বিচারের নামে কোনো প্রহসনের শিকার না হন—এই চেষ্টাই করছে ইকুয়েডর। তবে অস্ট্রেলিয়া কী ভূমিকা রাখছে তার নাগরিক অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে? নিজ দেশের নাগরিকের ন্যায়বিচারের স্বার্থে অস্ট্রেলিয়া কী করছে? চুপ করে ভদ্রতা বজায় রেখে ঘোলাটে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মাত্র। এমনিতেই সমর্থকেরা অভিযোগ করে আসছিলেন, অ্যাসাঞ্জকে রক্ষায় প্রায় কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে সাম্প্রতি কূটনৈতিক টানাহেঁচড়ার সময়ও অস্ট্রেলিয়া হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। ধারণা করা যায়, দেশটির এই নীতির সমালোচনায় আরও মুখর হয়ে উঠবেন অ্যাসাঞ্জের সমর্থকেরা। কারণ, অ্যাসাঞ্জের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়া নয়, লড়াই করছে অন্য একটি দেশ। টেলিগ্রাফ অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.