স্তন ক্যান্সার

ব্রেস্ট বা মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক শৈশব থেকে নারীত্ব এই সময়ের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে। নারীর এই স্তন ক্যান্সার মরণব্যাধি বাসা বাধতে পারে যে কোন সময় এবং সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ। সারা বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা অনেক এবং প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে।


২০০৫ সালে সারা বিশ্বে ক্যান্সারে মারা গেছে প্রায় ৭৫ লাখ লোক, তবে এশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে এর প্রকোপ বেশি। মরক্কোয় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে হু কর্মকর্তা রউফ বেনমার বলেন, ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এর ৭০ শতাংশ লোক নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আয়ের লোক। হু জানায়, ২০০৫ সালে স্তন ক্যান্সারের পর জরায়ু ক্যান্সারে মারা গেছে দুই-আড়াই লাখ নারীÑ এর ৮০ শতাংশই হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে। তার ধারণা, আগামী ১৫ বছরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ১০০-১৮০ শতাংশ ক্যান্সার বৃদ্ধি পাবে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় ?
নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও জানা যায়নি তাই একাধিক কারণে স্তন ক্যান্সার-এর জন্য দায়ী করা হয়-
থ মা-খালা এদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
থ অবিবাহিত বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
থ একই রকমভাবে যারা সন্তানকে কখনও স্তন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
থ ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।
থ বয়স যত বাড়ে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
থ অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।
থ একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধ বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।
কি করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেন :
১। সাধারণত ৩০ বয়রের পূর্বে এই রোগ কম হয়।
২। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৩। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
৪। কখনো কখনো বুকে চাকা, বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সে দিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।
এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপস্বর্গ নিয়ে আসে যেমন হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবে :
১। মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের ঢ-জধু.
২। স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম
৩। চাকা বা টিউমার থেকে রস (ঋঘঅঈ) নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের কি কি চিকিৎসা আছে :
সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।
কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায় :
১। ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে হবে। কোন চাকা পাওয়া যায় কিনা। চাকা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
২। বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে ১ বার মেমোগ্রাম করতে হবে।
৩। কোন প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের কাছে দেখা করতে হবে।
এই রোগ এড়ানোর উপায় কি?
যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি, তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় :
১। ৩০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।
২। রিসক ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন : ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
৩। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
৪। সন্তানকে বুকের দুধ পান করান।
৫। টাটকা শাক সব্জি ও ফল খান।
৬। সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হোন।
৭। ধূমপান ও এ্যালকোহল পরিহার করুন।
উপসংহার
মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেক দিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনঃবার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করেছে, যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। তাছাড়া এডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকস্ট্রাকশনও করা হচ্ছে।

ডা. এম এ হাসেম ভুঞা
সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
মোবাইল : ০১৭১১৫৩৩৩৭৩

No comments

Powered by Blogger.