মোবাইল ব্যাংকিং

মানুষের সৃজনক্ষমতার অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সংযোজন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সীমিত পর্যায়ে মোবাইল ফোন আমাদের দেশের মানুষের জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, পরবর্তীতে তা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে এবং পারস্পরিক যোগাযোগের সহজতর


মাধ্যম হিসেবে নিজের জায়গা করে নেয়। মোবাইল ফোনের এই সুবিধাকে আজ কতভাবেই না কাজে লাগানো হচ্ছে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন। এই ধারারই একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং, যা থেকে মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জে প্রত্যন্ত এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেÑ এটি আমাদের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। মোবাইল ফোন কোম্পানির মধ্যে সিটিসেল, বাংলালিংক ও এয়ারটেল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ও সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে।
তবে এটা সত্য যে, বাংলাদেশে এই সহজ ও নির্ঝঞ্ঝাট ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি এখনও ব্যাপকভিত্তিক হয়নি। সরকারী ডাক বিভাগ এখনও টাকা-পয়সা প্রেরণের অন্যতম মাধ্যম। কিছু কুরিয়ার সার্ভিস এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা খুবই সীমিত আকারে এবং তাতে খরচও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিস্তৃত করা আজ সময়ের দাবি।
এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ২৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে মোবাইল প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সেবা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার মধ্যে ১৪টি ব্যাংক এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নরের বক্তব্য অনুযায়ী এসব ব্যাংকের মাধ্যমে সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৮১টি এজেন্টের লোকেশনে প্রায় ৮ লাখ গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পাবে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও ব্যাপকতর হবে বলে সবার প্রত্যাশা। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো গেলে দেশের মানুষের জীবনে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.