এক অনন্য নভোচারী

মানবজাতির দূত হয়ে চাঁদে প্রথম পা রেখে যিনি ইতিহাস তৈরি করে গেছেন, সেই নিল আর্মস্ট্রং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে ১৯৩০ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। কোরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৬২ সালে তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘মহাকাশ কর্মসূচি’তে যোগ দেন।


১৯৬৬ সালে ‘জেমিনি-৮’ মহাশূন্য মিশন দিয়ে তাঁর প্রথম মহাকাশযাত্রা শুরু। তিনি ছিলেন এই মিশনের কমান্ড পাইলট। পরবর্তীকালে ১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম মনুষ্য অভিযান অ্যাপোলো-১১-এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আর্মস্ট্রং খুব অল্প বয়সেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেন। ছয় বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বিমানে চড়েন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে ১৬ বছর বয়সেই শিক্ষার্থী বিমান চালনার অনুমতি পান। ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ফল করে মার্কিন নৌবাহিনীর বৃত্তি পেয়ে ১৯৪৭ সালে পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
কোরীয় যুদ্ধে মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলট হিসেবে ১৯৪৯ সালে ডাক পড়ে। যুদ্ধবিমান চালনায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনটি পুরস্কারও পান তিনি। ১৯৫২ সালে দায়িত্ব থেকে ফিরে আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। কয়েক বছর পর ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিকসে (এনএসিএ) যোগ দেন। পরে এটিই নাসায় রূপ নেয়। সরকারি এই সংস্থায় তিনি বহুমুখী দায়িত্ব পালন করেন। আর্মস্ট্রং ১৯৫৬ সালে জ্যানেট শিরনকে বিয়ে করেন।
মহাকাশ কর্মসূচিতে আর্মস্ট্রংয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসে ১৯৬৯ সালে। মাইকেল কলিন্স ও এডুউইন ই ‘বাজ’ অলড্রিনের সঙ্গে তিনি চাঁদে নাসার প্রথম মানুষ পাঠানোর অভিযানে মনোনীত হন। ওই বছর ১৬ জুলাই সহযোগীদের নিয়ে অ্যাপোলো-১১ নভোযানে চড়ে চন্দ্র অভিযান শুরু করেন। অভিযান শেষে দুই নভোচারীকে নিয়ে ২৪ জুলাই নিরাপদে পৃথিবীর বুকে ফিরে আসেন। অ্যাপোলো-১১ ছিল আর্মস্ট্রংয়ের শেষ মহাকাশ অভিযান। ১৯৭১ সালে তিনি নাসা ছেড়ে যান। পরে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। একজন নভোচারী হিসেবে তিনি সব সময় নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন। অক্লান্ত প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। বিবিসি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.