লায়লা হত্যারহস্যঃ তিনটি কঙ্কাল উদ্ধার

পাকিস্তান বংশোদ্ভূত বলিউড অভিনেত্রী লায়লা খানের হত্যাকান্ড নিয়ে ঝড় বয়ে চলছে আলোচনার। প্রায় বছর দেড়েক নিখোঁজ থাকার পর সম্প্রতি জানা গেছে, সপরিবারে তিনি নিহত হয়েছেন। দুর্ধর্ষ আন্ডারগ্রাউন্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘণিষ্ঠ এই অভিনেত্রীর হত্যারহস্যের জট একটু একটু করে খুলতে শুরু করেছে।
গত ১০ জুলাই মঙ্গলবার লায়লা খানের ইগতপুরির খামারবাড়ির পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে ৩টি কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
লায়লা খানসহ তার পরিবারের ৬ সদস্যকে খুনের অভিযোগে প্রধান আসামী হিসেবে পারভেজ টাক ও আসিফ শেখকে  গত ৫ জুলাই আটক করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। আটককৃত পারভেজ হলেন লায়লার একসময়ের ঘণিষ্ঠ বন্ধু আর আসিফ শেখ হলেন লায়লার সৎ বাবা।

দুই আসামীকে রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর পারভেজ গত ৯ জুলাই বুধবার পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, লায়লা ও তার পরিবারের ৬ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করার পর তাদের খামারবাড়ির আশেপাশেই লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।

এই সূত্র ধরেই মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা এবং সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র ১০ জুলাই মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ইগতপুরির খামারবাড়ি ও তার আশেপাশে তল্লাশি শুরু করে। আসামী পারভেজ ও আসিফ শেখকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ এ অভিযান চালায়। খামারবাড়ির আশেপাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত তল্লাশি চালানোর পর ৩টি কঙ্কাল উদ্ধার করে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ বিভাগ। তবে কঙ্কাল ৩টির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ মুম্বাইয়ের অশিয়ারা ফ্যাট থেকে নিখোঁজ হন লায়লা ও তার পরিবার। আসামী পারভেজ টাক ও আসিফ শেখ পুলিশকে জানিয়েছে, গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি গুলি করে খুন করা হয় লায়লা ও তার মা-ভাই-বোনসহ মোট ৬ জনকে। নিহত ৬ জনের মধ্যে ৩টি দেহাবশেষ উদ্ধার হলেও অন্য ৩টি দেহাবশেষ এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। পুলিশ উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পারভেজ টাক পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, লায়লা ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল, মুম্বাইতে তারা নিরাপদ নন। নিরাপত্তার জন্য তাদের খুব দ্রুত দুবাই চলে যাওয়া দরকার। এভাবেই পরিকল্পনা অনুযায়ী লায়লা ও তার পরিবারকে দুটি গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বের করে আনা হয়। তাদের সবাইকে কাছাকাছি এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গুলি হত্যা করা হয়। এরপর মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এই হত্যাকান্ডে পারভেজের সঙ্গী ছিল আসিফ শেখ ও আফগান খান।

লায়লা ও তার পরিবারকে হত্যা করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রধান আসামী পারভেজ দুবাই পালিয়ে যান। অন্যরা গা ঢাকা দেন। প্রায় এক বছর দুবাই থাকার পর সম্প্রতি পারভেজ জম্মুতে ফিরে আসেন। তিনি হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহার করা লায়লার দামি একটি গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন। গাড়িটি দেখেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপরই গ্রেফতার করা হয় পারভেজকে।

পুলিশের দাবি, জেরার মুখে পারভেজ জানিয়েছে, লায়লার সম্পত্তি হস্তগত করার উদ্দেশেই এই হত্যাকান্ড। তবে পুলিশ পুরো বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখছে। কারণ ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সন্দেহ অভিনেত্রী লায়লা খানের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ ছিল। ডন দাউদ ইব্রাহিমের এজেন্ট হিসেবে বিশেষ কোনো মিশনে নেমেছিলেন এই অভিনেত্রী।

লায়লা খানের আসল নাম রেশমা খান। বলিউডে লায়লার অভিনীত শেষ ছবি হচ্ছে রাজেশ খান্নার ‘ওয়াফা’।

No comments

Powered by Blogger.