মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ-সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকে

জাতীয় প্রেসক্লাবের 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা। যে বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেটা বাংলাদেশের জন্য আরো বড় উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য আগামীতে বড় ধরনের অঘোষিত বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে যাচ্ছে, তাঁর কথার সূত্র ধরে এমন আশঙ্কা করা যেতে পারে।


জাতীয় প্রেসক্লাবের 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের 'মিট দ্য প্রেস' নিয়ে সবার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেখানে তিনি কী বক্তব্য তুলে ধরেন, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষক মহলের সজাগ থাকারই কথা। বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা সেতু ইস্যুতে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে বাংলাদেশ- তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠান সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্রদূত অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এসেছেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। তাঁর এই বৈঠক নানা কারণে গুরুত্ব বহন করে। কারণ আগামী সেপ্টেম্বরেই ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি সংলাপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই ওই বৈঠকের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যুক্তরাষ্ট্র গমন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সংগত কারণেই এ বিষয়টি নিয়ে দেশের পর্যবেক্ষক মহলেরও আগ্রহ রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। তাঁর বক্তব্য যে বাংলাদেশের জন্য আগামী দিনের হতাশাজনক ইঙ্গিত বহন করছে, এমন আশঙ্কা স্পষ্ট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সে উদ্বেগ দেশের মানুষেরও ছিল। চলমান নানা ঘটনার রেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সেই উদ্বেগ ও আশঙ্কাই যেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কথার ভেতর দিয়ে ফুটে উঠল। জাতীয় প্রেসক্লাবের 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, গণমাধ্যম, সুশাসন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণীতেও ক্রেতাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অনেক ঘটনা রয়েছে। পোশাক শিল্পে কাজের পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিয়ে মার্কিন ক্রেতারা খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সবাই এখানকার স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তিনি আশা করেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব পক্ষ সমঝোতায় পেঁৗছবে। তাঁর ধারণা, সম্প্রতি উভয় পক্ষ নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। সরকার এবং বিরোধী দল সংলাপে বসে একটি পথ খুঁজে বের করবে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এটাও মনে করেন, কাজটি খুব সহজ নয়।
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে কথা বললেও দেশের অর্থনৈতিক দিকটিই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কথায় গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, কথার ভেতর দিয়ে আগামীতে একটি অঘোষিত অর্থনৈতিক অবরোধের ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কোনো কারণে তেমনটি ঘটে গেলে বাংলাদেশের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সঠিক ও কুশলী কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলকে দেশের স্বার্থে এ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে হবে। এই সংকট মোকাবিলায় সরকার ও বিরোধী দলকে সহমত পোষণ করতেই হবে। আমরা আশা করব, কোনো জাতীয় সংকট দেখা দেওয়ার আগেই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না।

No comments

Powered by Blogger.