সঞ্চয়পত্রের মুনাফা-নিরাপদ বিনিয়োগ উৎসাহিত হোক

সঞ্চয়পত্র প্রকৃতপক্ষে জনসাধারণের কাছে সরকারের ঋণ। বিভিন্ন ধরনের বন্ডের মতো এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণ, বিশেষ করে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগানো হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সঞ্চয়পত্র কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিবেচিত হয়েছে।


আবার বিনিয়োগকারীদের বিবেচনা থেকেও বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। এই খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হয়। শেয়ারবাজার কিংবা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে লাভের অঙ্ক যেমন হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে, তেমনি বড় ধরনের লোকসানেরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তে মুনাফা তোলা যায় এবং মেয়াদ শেষে হাতে আসে আসল অর্থ। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে এ কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত স্বস্তিদায়ক। মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকলে অবশ্য ক্রেতারা সমস্যায় পড়ে। কখনও কখনও দেখা যায়, মুনাফার হারের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কাছাকাছি কিংবা এমনকি বেশিও থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে নিরুৎসাহিত হয়। বর্তমান সময়ে মূল্যস্ফীতির হার দশ শতাংশেরও বেশি এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা মেলে এর তুলনায় কম। এ অবস্থায় সরকারের কাছে অর্থ জমা রাখার মানে আসল অর্থের একটি অংশ হারানো। আবার শেয়ারবাজারে কিংবা আরও কিছু ক্ষেত্রে ভালো লাভের সম্ভাবনা দেখলেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে অনেকে দূরে থাকে। গত বছর জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে দেওয়ার সময় অর্থমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা ছিল পুঁজি বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক তখন বাড়ছিল এবং এমনকি সামান্য পুঁজি যাদের রয়েছে তারাও এ বাজারে যেতে উৎসাহবোধ করছিল। আরেকটি বিবেচনা ছিল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি বিবেচিত হওয়ায় রাজস্ব বাজেটের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমানো। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের তরফে এ কারণে সুদের হার কমানোর চাপ ছিল। তাদের আরও যুক্তি ছিল যে, অভ্যন্তরীণ ঋণের চাইতে বিশ্ববাজার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এর তুলনায় কম সুদ দিয়েই ঋণ সংগ্রহ করা যায়। তবে মুনাফার হার হ্রাসের পাশাপাশি মুনাফার ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করায় বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হতাশও হয়েছিল। সরকারের এ পদক্ষেপ এবং একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের প্রতি আকর্ষণের কারণে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে কমে যায়। এ প্রেক্ষাপটে সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে তাতে সন্দেহ নেই। এভাবে সঞ্চয়ের মাধ্যমে বাজার থেকে বাড়তি অর্থ সরকারের হাতে চলে গেলে মূল্যস্ফীতির চাপও কিছু কমতে পারে। তবে সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটা হচ্ছে ঋণ এবং এর দায়ও রয়েছে। সরকার চড়া সুদে করা ঋণের অর্থ ব্যয়ে যত্নবান না হলে দায়ের বোঝা ক্রমে বড় হতে থাকে। এ ধরনের ঋণের অর্থ কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করা হয় তারও জবাবদিহি থাকা দরকার। তবে সবকিছুর প্রত্যাশিত যে অর্থমন্ত্রী নিরাপদ বিনিয়োগ উৎসাহিত করবেন।
 

No comments

Powered by Blogger.