হায়েক এবার এলেনা

এক আশ্চর্য পৃথিবী। হলিউডকে কিছুতেই আপনি কোনো সংজ্ঞার ফ্রেমে বন্দী করতে পারবেন না। এখানে কিছু দাম্পত্য সম্পর্ক বেদনার বালুচরে গড়া খেলাঘর; আবার কিছু সম্পর্ক ইস্পাতদৃঢ়। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে কেটি হোমস যেখানে ইতি টেনে দেন দাম্পত্য জীবনের; সেই মুহূর্তে সালমা হায়েক অবলীলায় ঘোষণা করতে


পারেন, নিজের সংসার, নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে যেকোনো মুহূর্তেই গ্ল্যামার, যশ-খ্যাতির এই আলো-ঝলমলে পৃথিবীটাকে জানিয়ে দিতে পারেন বিদায়।
গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে হায়েকের নতুন ছবি স্যাভাজেস। পরিচালক তিনবারের অস্কার জয়ী অলিভার স্টোন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখা, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ছবি বানিয়ে আশির দশকের শেষে আলোচনায় আসা স্টোন জীবনের মসৃণতায় বিশ্বাস করেন না। জীবন মানেই তাঁর কাছে এবড়োখেবড়ো পথ। হায়েকের জন্য তিনি ডেসপারেডোর সেই বিষণ্ন কিন্তু ভীষণ রকম আবেদনময়ী ক্যারোলিনার চরিত্র রাখেননি। হায়েক এবার রীতিমতো নির্দয় মেক্সিকান মাদক ব্যবসায়ী চরিত্রে!
স্যাভাজেস-এর প্রচারণার জন্যই ৪৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী এখন চষে বেড়াচ্ছেন হলিউডের এ পাড়া-ও পাড়া। দিচ্ছেন দেদার সাক্ষাৎকার। এমনই এক সাক্ষাৎকারে মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া এই হিস্পানিক অভিনেত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, চার বছর বয়সী মেয়ে ভালেন্তিনার জন্য দরকার হলে ছেড়ে দেবেন অভিনয়।
হায়েক এমনিতে সংসার-পাগল। হলিউডে তারায় তারায় সংসারটার স্থায়িত্ব বেশি টেকে না বলেই কিনা স্বামী হিসেবে মালা পরিয়েছেন ফরাসি ধনকুবের ফ্রাঁকোইস-অঁরি পিয়ল্টের গলায়। ২০০৭ সালের মার্চে একই সঙ্গে সুসংবাদ দিয়েছেন হায়েক। পিয়ল্টের সঙ্গে বাগদান আর তাঁর মা হতে চলার খবর। মাঝখানে কিছুদিনের জন্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও ২০০৯ সালের ভালোবাসা দিবসে, প্রেমের তীর্থভূমি প্যারিসে বিয়ে করেন। বিয়েটা আরও পাকাপোক্ত করতেই হয়তো পরের বছরও আবার বিয়ে করেন একে-অন্যকে! এবারের বিয়ের মঞ্চ আরেক প্রণয়-তীর্থ ভেনিস। এর মধ্যে ২০০৮ সালে জন্ম নেয় তাঁদের কন্যাসন্তান।
মেক্সিকো আর হলিউড দুই জায়গাতেই ক্যারিয়ার টিকিয়ে রেখেছিলেন বলে এমনিতে বছরে চারটি-পাঁচটি ছবিও মুক্তি পেয়েছে হায়েকের। কিন্তু মেয়ের জন্মের পর থেকে ব্যস্ততা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। ইউএস টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হায়েক বলেছেন, ব্যক্তি আর পেশাদার জীবনে একটা ভারসাম্য আছে। এই ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই সরে দাঁড়াবেন, ‘এখন এটা ভালোমতোই কাজ করছে। ভালেন্তিনা সত্যিই খুব বুদ্ধিমতী, ওর বয়সও তো অনেক কম। কিন্তু পরে যদি ওর বেড়ে ওঠার পথে আমার ক্যারিয়ার কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আমি কাজ করা বন্ধ করে দেব। আমি এখন মূলত শুধু গ্রীষ্মেই কাজ করি। ফলে আপাতত আমার সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে ওকে প্যারিসে থাকতে হবে আর আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদটা যদি খুব বেশি করে হয়, আমি থেমে যাব।’
সবকিছু এখন যে সামলে নিতে পারছেন, এর জন্য স্বামীর প্রতিও অনেক কৃতজ্ঞতা তাঁর, ‘স্বামীর কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পাই। আপনার জীবনে সত্যিই একজন সঙ্গী দরকার। যখন সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলি, ও-ই সব সামাল দেয়। আমাকে শান্ত হতে সাহায্য করে। আমি ভাগ্যবান, কারণ অনেক নারীই তাঁর পেশাদার জীবনে স্বামীর সহযোগিতা পান না।’
ভালেন্তিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে হায়েক এতটাই সচেতন, স্যাভাজেস ওকে দেখতে দেবেন না। শুধু তা-ই নয়, এমনিতে শুটিং স্পটে মায়ের সঙ্গী হলেও এই ছবির সেটে ভালেন্তিনাকে নিয়ে আসেননি। মারদাঙ্গা ছবিটা সন্তানকে দেখাতেও চান না। তা ছাড়া পর্দার এলেনার সঙ্গে ভালেন্তিনা যে তার মাকে মেলাতেই পারবে না।
আপনারাও যেন মেক্সিকান বাজা কার্টেলের মাদক-সম্রাজ্ঞী এলেনাকে আবার হায়েকের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলেন!
 রাজীব হাসান
হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.