দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য by আবুল কাশেম ও রাজীব আহমেদ

আমদানিমূল্যের সঙ্গে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১০ শতাংশ পরিবহন খরচ, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ১ শতাংশ হারে মুনাফার সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা বিক্রয়মূল্য পড়ে ১৪ টাকা ২৬ পয়সা। সেই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা দরে।


একইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য সব পণ্যেও ব্যবসায়ীরা অধিক হারে মুনাফা করছেন। বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি খরচ, শুল্ক-কর, পরিবহন খরচ, আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মুনাফা হিসাব করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখতে পেয়েছে, খুচরা বাজারে পণ্যগুলোর বিক্রয়মূল্য যা হওয়ার কথা, ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন এর প্রায় দ্বিগুণ দামে। এ অবস্থায় পণ্যের প্রকৃত দাম জানিয়ে গত রবিবার দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
দুই বছর ধরে দেশে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদের ভালো ফলন হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম পেলে ভবিষ্যতে এসব পণ্য আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। তাঁরা এসব পণ্যের নূ্যনতম দাম ঠিক করে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করারও পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পেঁয়াজ, রসুন, হলুদের ন্যায্য দাম পাননি। দুই টাকা কেজি দরেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি অনেকে। সেই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। আমদানি অবারিত। শুল্কও মাত্র ৫ শতাংশ।
কৃষকরা দাম না পেলেও ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পেঁয়াজে কেজিপ্রতি ১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজে ২০ টাকারও বেশি লাভ করছেন। ৫০ টাকা কেজি দরে হলুদ বিক্রি করেছেন কৃষক। সেটি গুঁড়া করে মোড়ক লাগিয়ে কিভাবে কিছু কম্পানি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছে তা নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বারের এক সভায় প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, আমদানি করা খাদ্যপণ্যের দাম রমজানে ব্যবসায়ীরা যাতে আরেক দফা না বাড়ান সে জন্য যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সদর আলী বিশ্বাসের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আসন্ন রমজান মাসে সব ভোগ্যপণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। কোনো ব্যবসায়ী অসাধু উপায়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে সরবরাহ লাইনের ওপর নজর রেখে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও অনুরোধ করা হলো।'
সম্প্রতি আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, আমদানিকারকরা শতকরা এক টাকা, পাইকারি ব্যবসায়ীরা শতকরা এক টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ শতকরা ১০ টাকা হারে মুনাফা করতে পারবেন। ব্যবসায়ীরাও মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে স্পষ্ট, সব পণ্যের ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীরা ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যসংবলিত ছকের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আসন্ন রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্যপণ্যের খুচরা পর্যায়ে মূল্য অস্থিতিশীল করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর কতিপয় ভোগ্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্যও পাঠানো হলো।'
গত ১ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত আমদানি হওয়া পণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখতে পায়, আমদানি করা প্রতি কেজি শুকনা মরিচের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ১২৪ টাকা ৭৩ পয়সা। কিন্তু ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এ মরিচের বর্তমান দাম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। একইভাবে ৬৭ টাকা ৪২ পয়সা দরের রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মুনাফার পরও আমদানি করা খেজুরের দাম হওয়ার কথা ৬৫ টাকা ৪২ পয়সা। বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। একইভাবে ৮৭ টাকা ৭৭ পয়সা কেজির হলুদ ৯০ থেকে ১৪০ টাকা, ৬৯ টাকা ৮৯ পয়সার মসুর ডাল ৭৫ থেকে ১১৫ টাকা, ৭৫ টাকার ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, ৪১ টাকা ১৯ পয়সা দরের আদা ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং ২৪২ টাকা ৩০ পয়সা কেজি দরের জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকায়।

No comments

Powered by Blogger.