পশ্চিমবঙ্গ-প্রথম কার্যদিবসেই মমতার নতুন বার্তা by জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী

পশ্চিমবঙ্গে বলা যেতে পারে গণজোয়ারের মধ্য দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলেন এবং এটা ধরে নেওয়া যায়, তিনি জনগণের প্রত্যাশা সম্পর্কে সজাগ রয়েছেন। প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করলেন এবং বললেন, আমরা কাজ করতে চাই এবং জনগণের কল্যাণ করতে চাই


পশ্চিমবঙ্গের নতুন ও প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম কার্যদিবসেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিলেন এবং সবচেয়ে বড় কথা, রাত ১২টা পর্যন্ত অফিস করলেন। তিনি 'মেসেজ' অর্থাৎ বার্তাটি দিলেন যে, জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য সিদ্ধান্তের বিলম্বের কোনো অবকাশ নেই এবং একই সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিলেন, কাজের মধ্য দিয়েই তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চান। মন্ত্রিসভার প্রথম সভায়ই তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিলেন, এর মধ্যে রয়েছে অনেক আলোচিত সিঙ্গুরে আগের বামফ্রন্ট সরকার কর্তৃক শিল্পায়নের জন্য অধিগ্রহণ করা কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া। যেসব কৃষক নিজদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ২০০৭ সালে এবং সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যারা নিহত ও আহত হয়েছিলেন, নতুন সরকার তাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের এসব ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ান এবং শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের রাজ্য নির্বাচনে বিশাল জয়ের এটা একটা বড় কারণ। তাই নতুন সরকার প্রথম দিনেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
গত শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী সরকারপ্রধান হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন।
মমতার নেতৃত্বে নতুন সরকারের ৩৭ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং ৪ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে দু'জন কংগ্রেসের এবং বাকি সবাই তৃণমূলের। পরিচিত অনেকেই নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জাভেদ আহমেদ খান, নূরে আলম চৌধুরী, ব্রাত বসু এবং সাবিত্রী মিত্র নতুন মন্ত্রী হয়েছেন। 'জায়ান্ট কিলার' অর্থাৎ প্রভাবশালীদের হারিয়ে যারা জয়ী হয়েছেন, তারাও মন্ত্রী হয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দফতর পেয়েছেন।
এমনই একজন 'জায়ান্ট কিলার' হলেন সাবেক মুখ্য সচিব মনীষ গুপ্ত, যিনি বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়ে দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। মনীষ গুপ্ত যাদবপুর নির্বাচনী এলাকায় বেশ সহজেই হারিয়ে দেন তার সাবেক 'বস' বুদ্ধদেবকে, যিনি গত বেশ কয়েক বছর যথেষ্ট প্রতাপ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন। কিন্তু এবার 'মমতা-ঝড়ে' অনেকেই উড়ে গেছেন এবং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাদেরই একজন। মনীষ গুপ্তকে উন্নয়ন ও পরিকল্পনামন্ত্রী করা হয়েছে।
আরেকজন এমন ব্যক্তি হলেন অধ্যাপক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়_ যিনি হারিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে। বর্ধমানের দক্ষিণ নির্বাচনী এলাকায় বিশাল ব্যবধানে তিনি পরাজিত করেন নিরুপম সেনকে এবং পুরস্কারস্বরূপ মন্ত্রী হয়েছেন। উল্লেখ্য, বামফ্রন্ট সরকারের শেষের কয়েক বছর সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের কারণে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নিরুপম সেন অনেক বিতর্কিত ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করে শিল্পায়নের বিরোধী ছিলেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি জনগণের সমর্থন পেয়েছেন। এই ইস্যুতে তার বলিষ্ঠতা, সাহস ও নিরলস সংগ্রামের কারণে অনেকটা দুর্বল অবস্থান থেকে তৃণমূল অত্যন্ত অল্প সময়ে বিশাল সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। তবে জয়ের মাত্রা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বলা যেতে পারে গণজোয়ারের মধ্য দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলেন এবং এটা ধরে নেওয়া যায়, তিনি জনগণের প্রত্যাশা সম্পর্কে সজাগ রয়েছেন। প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করলেন এবং বললেন, আমরা কাজ করতে চাই এবং জনগণের কল্যাণ করতে চাই। তার এই ব্রত সফল হোক এটাই কামনা। তবে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে যে ব্যবধান, সেটা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকার সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করে সেভাবে কার্যপরিচালনা করে সাফল্য পায়, সেটাই হবে তার বড় পাওয়া ও অর্জন। কাজটি বেশ কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সময়ই বলে দেবে মমতা কতটুকু সার্থক হয়েছেন।


জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী : আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিশ্লেষক
 

No comments

Powered by Blogger.