অবহেলার খপ্পরে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা-জনসংখ্যা-সমস্যা

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্মসূচি প্রায় থেমে আছে। কিন্তু সময় ও জন্ম কোনোটাই থেমে নেই বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের এই দেশে। সরকারি হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ২০১১ সালে ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ, অথচ বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১৬ কোটি।


এত ‘নেই’-এর মধ্যে স্থবির হয়ে আছে জনসংখ্যার ভার সহনীয় করার সরকারি কর্মসূচি। অথচ বলা হয়, জনসংখ্যাই নাকি এক নম্বর জাতীয় সমস্যা!
জনসংখ্যা বিষয়ে জাতীয় গাফিলতির প্রমাণ এটাই যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সামাজিক সূচকে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ তরতর করে এগিয়ে গেলেও দুটি ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। এর একটি হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যটি বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ বন্ধ হলেই বছরে ১০ লাখ জন্ম কমবে, কমবে মাতৃমৃত্যুও।
গত বুধবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশে গড় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গড় হার এটা হলেও সিলেট বিভাগে বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২ দশমিক ১ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। রংপুর ও রাজশাহীতে জন্ম ও মৃত্যুর হার প্রায় সমান। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে জনসংখ্যা কমছে বরিশাল ও খুলনা বিভাগে। এর কারণ জনসচেতনতা নয়, জলবায়ু-উদ্বাস্তু হয়ে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে, অধিকতর দরিদ্র ও সাংস্কৃতিকভাবে উদার এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। বিপরীতে অধিকতর সচ্ছল ও রক্ষণশীল এলাকায় বৃদ্ধির হার বেশি। সুতরাং জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি আঞ্চলিক কৌশলও নিতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের হারের থেকে অধিক হওয়ায় বেশি জনসংখ্যা মানে বেশি দারিদ্র্য।
সরকারের সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বলছে, নিরক্ষর ৭৯ শতাংশ এবং দরিদ্র ৮৫ শতাংশ নারী কোনো মাধ্যম থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা পান না। অথচ দেশে গণমাধ্যমের বিপুল বিস্তার হলেও এদিকে সবারই নজর কম। জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রধান উদ্যোক্তা এখনো সরকার। এনজিওরা ৪০ বছর ধরে এ খাতে কাজ করলেও তাদের অবদান মাত্র ৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ খুবই জরুরি এবং তা হতে হবে ‘পপুলেশন মোমেন্টাম’ তথা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই।
দেশে বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠীই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে জনসংখ্যা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে তরুণদের। কম শিক্ষিত, হতদরিদ্র, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী এবং রাজধানীসহ বড় বড় শহরের বস্তিবাসীর দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। যাঁরা সন্তান চান না, তাঁদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী সুলভ করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচি বাড়াতে হবে। নারীর স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা দরকার এবং এটাই এবারের জনসংখ্যা দিবসের স্লোগান। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও নারীর স্বাস্থ্যসেবায় অধিক বরাদ্দ দিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
দেশ যেহেতু বাড়ছে না, সেহেতু জনসংখ্যাই কমতে হবে। সরকারসহ সবাইকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ জনসংখ্যা নামের একটি টাইম বোমার ওপর বসে আছে এবং এই টাইম বোমার বিস্ফোরণের ধাক্কা কমিয়ে আনায় সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা কমানোয় জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়া তাই আর কোনো উপায় নেই।

No comments

Powered by Blogger.