ভাড়া নিয়ে পরিবহনে নৈরাজ্য by সাইফুজ্জামান

যানজট, ট্রাফিক আইন অমান্য, পরিবহনের স্বল্প বাহন নগরবাসীর প্রাত্যহিক চেনা দৃশ্য। পূর্বঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ একদিন জানা গেল, রাত ১২টায় সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি হবে। পরিবহন সেক্টরের মালিক, শ্রমিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা না হয়েই ভাড়া বৃদ্ধি পেল। এখন পর্যন্ত এ ভাড়া বৃদ্ধি ও যাত্রীদের বিড়ম্বনা অব্যাহত আছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৫৫ পয়সা ও ১ টাকা ৩৫ পয়সা। বিভিন্ন রুটে গিয়ে দেখা গেছে এর বিপরীত চিত্র। ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে মালিকপক্ষের লোকজন। সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকার কথা থাকলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। মোহাম্মদপুর ও মিরপুরগামী কাউন্টারে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। মতিঝিল, গুলিস্তান, প্রেস ক্লাবের টিকিট তিন পরিবহন ১০ টাকা, ১৫ টাকা ও ২০ টাকা হারে বিক্রি করছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কোনো বাস কোম্পানি অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হবে; কিন্তু বহাল তবিয়তে বাস চলছে। মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসছে লাঠিয়াল বাহিনীর খৰ হস্ত।
খোদ স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ১৯ মে যাত্রীবেশে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে বাসভাড়া-সন্ত্রাসের ভয়াবহ চিত্র দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতিমন্ত্রী একটি বাসে চেপে মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে শুক্রাবাদ, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, শাহবাগ হয়ে প্রেস ক্লাব আসেন। দেখতে পান কোনো বাসস্টপেজে ভাড়ার তালিকা নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গন্তব্য ও ভাড়ার তালিকা যথাযথভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা করা ও শাস্তির ব্যবস্থা এবং নতুন বাস্তবতায় আজ ভাবতে হবে।
গত ২০ মে সমকালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়_ ১. নির্ধারিত ভাড়া কার্যক্রমের প্রথম দিনে সরকারি বাসে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে, ২. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রী-কন্ডাক্টরের মধ্যে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা হয়েছে, ৩. কিছু ক্ষেত্রে রুট পারমিট জব্দ ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে, ৪. দূরপাল্লার বাসে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত রুট পারমিট জব্দ ও জরিমানা আদায় করলেও গলাকাটা ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমের পর হঠাৎ করে কোথাও কোথাও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।
সরকার নিয়ন্ত্রিত বাস বিআরটিসি বেসরকারি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে। বেসরকারি বাসে ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের ভাড়া ৬ টাকা, অথচ বিআরটিসি নিচ্ছে ৮ টাকা। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসেও ভাড়া বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সরকার প্রতি কিলোমিটার ২১ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করলেও দেখা যাচ্ছে যাত্রীপ্রতি সব রুটে ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা থেকে বগুড়ার ভাড়া ২০০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকাসহ বিভিন্ন পরিবহন ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। নির্দিষ্ট আসনের বাইরেও যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকছে কিংবা বাসের ছাদে স্থান করে নিচ্ছে। অদক্ষ চালক অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস চালাচ্ছে। গাড়ি চলাচলের উপযোগী কি-না তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ জনসাধারণকে।
সচেতন হওয়া প্রয়োজন যাত্রীসাধারণকে। সচেতন জনগণই বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের অতিরিক্ত ভাড়া-সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারে। সরকারি নীতিনির্ধারকদের কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। মান্ধাতা আমলের আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অধিকাংশ ঘাতক বাসের মালিক পার পেয়ে যায়। মালিক সমিতির দাবির মুখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কঠোর আইনের প্রয়োগ থেকে পিছিয়ে আসতে হয়। মালিক-কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে বলেছে, অধিকাংশ পরিবহন চাঁদাবাজির শিকার। চাঁদাবাজির অর্থ মিটিয়ে তাদের ব্যবসা রক্ষার জন্য টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কিছু করার থাকে না। এটা আংশিক সত্য। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি প্রয়োজন। চাঁদাবাজির অবসান ঘটাতে হবে। যাত্রী পরিবহনের সহজ ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য বেসরকারি ও সরকারি উভয় শ্রেণীর বাস বৃদ্ধি করতে হবে। বন্ধ করতে হবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
romeozaman@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.