পবিত্র কোরআনের আলো-পাপ-পুণ্যের ভিত্তিতে পরকালে মানুষের পরিণতি নির্ধারিত হবে

৭. ফালানাক্বুস্সান্না আ'লাইহিম বিই'লমিন ওয়া মা কুন্না গা-য়িবীন। ৮. ওয়ালওয়ায্নু ইয়াওমায়িযিল হাক্কু; ফামান ছাক্বুলাত মাওয়া-যীনুহূ ফাউলা-য়িকা হুমুল মুফ্লিহূন। ৯. ওয়া মান খাফ্ফাত মাওয়া-যীনুহূ ফাউলা-য়িকাল্লাযীনা খাছিরূ আনফুছাহুম বিমা কা-নূ বিআয়া-তিনা ইয়ায্বলিমূন।


১০. ওয়ালাক্বাদ মাক্কান্না-কুম ফিল আরদ্বি ওয়াজাআ'লনা লাকুম ফীহা মাআ'-য়িশা; ক্বালিমাম্ মা তাশকুরূন।
১১. ওয়ালাক্বাদ খালাক্বনা-কুম ছুম্মা সাওওয়ারনা-কুম ছুম্মা ক্বুলনা লিলমালা-য়িকাতি ছ্জুদূ লিআ-দাম; ফাছাজাদূ ইল্লা ইবলীছা; লাম ইয়াকুম্ মিনাছ্ ছা-জিদীন।
[সুরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৭-১১]

অনুবাদ : ৭. অতঃপর আমি আমার (চিরজাগ্রত) জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের সব ক্রিয়াকর্ম তুলে ধরব, কারণ আমি কখনোই অনুপস্থিত ছিলাম না।
৮. সেদিন পাপ-পুণ্যের যে ওজন করা হবে, তা সত্যের ওপর ভিত্তি করে। সুতরাং যাদের (সৎকর্মের) পাল্লা ভারী হবে তারাই সফল হবে।
৯. আর যাদের (সৎকর্মের) পাল্লা হালকা হবে তারাই হচ্ছে সেসব মানুষ, যারা আমার আয়াতগুলোর প্রতি সুবিচার না করে নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।
১০. এটা তো সত্য কথা, আমি তোমাদের পৃথিবীতে বসবাসের জায়গা দিয়েছি এবং এখানে তোমাদের জন্য সব ধরনের জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা আদায় করো।
১১. আর এটাও তো সত্য যে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব দান করেছি। এরপর আমি ফেরেশতাদের বলেছি, আদমকে সিজদা করো, তখন সবাই আদমকে সিজদা করল, ইবলিশ ছাড়া। সে কিছুতেই সিজদাকারীদের মধ্যে শামিল হলো না।

ব্যাখ্যা : ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জ্ঞানচক্ষুর ব্যাপ্তি ও চিরন্তনতার প্রসঙ্গ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানচক্ষু বিশ্বজগতের সর্বব্যাপী, অনাদি ও অনন্ত। তিনি সব দেখেন এবং সর্বত্র উপস্থিত। মানুষের অন্তরেও তিনি উপস্থিত। সুতরাং তাঁর কাছে কেউ কিছু গোপন করতে পারবে না। শেষ বিচারের দিন তিনি সব মানুষের সারা জীবনের ক্রিয়াকর্ম তাদের সামনে তুলে ধরবেন। এ কাজ তাঁর কাছে মোটেও কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ সৃষ্ট প্রকৃতির রাজ্যের যে অপরিসীম রহস্যের যৎসামান্য কিছু আধুনিককালে মানুষ আবিষ্কার করতে পেরেছে, তা লক্ষ করলেও বিষয়টা বোঝা সহজ হয়। হাশরের দিন মানুষের সামনে যখন তার জীবনের ক্রিয়াকলাপের অবিকল চিত্র তুলে ধরা হবে, তখন মানুষ তা দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হবে। ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, সেদিন পাপ-পুণ্য পরিমাপ করা হবে অত্যন্ত সঠিকভাবে। সেখানে সত্য ও ন্যায়ের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কারো অভিযোগ তোলার বা অস্বীকার করার কিছু থাকবে না। সেখানে যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফল, তারাই বেহেশতবাসী। ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যাদের পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে অর্থাৎ পাপের পাল্লা ভারী হবে, তারা মহাসংকটে পড়বে। তারা তখন দেখতে পাবে আল্লাহর আয়াতগুলোর প্রতি সুবিচার না করার কারণে অর্থাৎ সেগুলো মেনে না চলার কারণে তারা আজ মহা ক্ষতিগ্রস্ত। এভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথা আবারও পরিষ্কার করা হলো, পাপ-পুণ্যের ভিত্তিতে পরকালে মানুষের পরিণতি নির্ধারণ হবে।
১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পৃথিবীতে মানুষের জন্য সৃষ্টি করা তাঁর অপরিসীম নিয়ামতের কথা। আল্লাহ মানুষের বসবাসের জন্য সৃষ্টি করেছেন এই ঐশ্বর্যমণ্ডিত পৃথিবী আর এখানে সৃষ্টি করে দিয়েছেন সব ধরনের জীবিকার ব্যবস্থা। এই বিশ্ব প্রকৃতি এবং পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করলেও আমরা দেখতে পাই, মানুষের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য কত সম্ভাবনাময় করে তিনি সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবী। সুতরাং মানুষেরও কর্তব্য রয়েছে কৃতজ্ঞ হওয়ার। ১১ নম্বর আয়াতে মানুষ সৃষ্টির প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে টেনে আনা হয়েছে আদম ও ইবলিশের ঘটনা। আদম ও ইবলিশের ঘটনা সুরা বাকারার ৩৪-৩৯ নম্বর আয়াতেও প্রায় একইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.