জ্ঞান বাড়লে শরীরও তেজি by একরামুল হক শামীম

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কত ধরনের যে গবেষণা হয় তার ইয়ত্তা নেই। নানা বিষয় নিয়ে গবেষকদের গবেষণাকর্ম চলে। গবেষণার ফলগুলো আবার অনেক সময় চিত্তাকর্ষক হয়। গবেষণার ফলগুলো নিয়েই আলাদা কিছু গবেষণা হতে পারে। গবেষণা এবং গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে অনেক ধরনের কথা এমনিতেই প্রচলিত রয়েছে।


কেউ কেউ অভিযোগ করেন ফান্ডিংয়ের ওপর গবেষণার ফলাফল অনেকাংশেই নির্ভর করে। এর ফলে যে প্রতিষ্ঠানটি গবেষণার পেছনে টাকা খরচ করছে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত বিষয়গুলোর প্রতিফলন থাকে গবেষণায়। তবে এটিকে অযথা অভিযোগ হিসেবেই উড়িয়ে দিতে চান কেউ কেউ। জীবনযাপন নিয়ে করা গবেষণাগুলো মানুষের জীবনযাপনের রীতি পুনর্বিন্যাসে ভূমিকা রাখে মনে করেন এই মতের প্রবক্তারা। ব্যাপার যাই হোক না কেন জরিপ চলতেই থাকবে। নিত্যনতুন জরিপের ফলাফল সাময়িকভাবে আমাদের ভাবিত করবে। কেউ আবার জরিপের ফল অনুযায়ী সিদ্ধান্তও নিতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি গবেষণার দিকে নজর দেওয়া যাক। প্রথম গবেষণাটি উচ্চশিক্ষা আর বার্ধক্য নিয়ে। উচ্চশিক্ষিতদের তাড়াতাড়ি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কম বলে জানা যায় এই গবেষণার মাধ্যমে। প্রায় সাড়ে ৪শ' লোকের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চালানো গবেষণার ভিত্তিতে এই ফল প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন গবেষক এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ডিএনএর টেলোমেরসের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়েছে। টেলোমেরসের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে বয়স কম-বৃদ্ধির সম্পর্ক কোথায় তা জানতে হবে। ক্রোমোজোমের শেষ ভাগ টেলোমেরস ঢেকে রাখে। ফলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় ক্রোমোজোম। তাছাড়া বার্ধক্যের সঙ্গে জড়িত সেলের কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয় টেলোমেরস। ফলে দীর্ঘ টেলোমেরস থাকলে ধারণা করা হয় দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কম হবে। অন্যদিকে ছোট টেলোমেরস থাকলে দ্রুত বার্ধক্য হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম শিক্ষিত তাদের টেলোমেরসের দৈর্ঘ্য কম আর যারা উচ্চশিক্ষিত তাদের টেলোমেরসের দৈর্ঘ্য বেশি। ফলে উচ্চশিক্ষিতদের তাড়াতাড়ি বৃদ্ধ হওয়ার প্রবণতা কম। এতদিন ধরে মনে করা হতো বার্ধক্য বিষয়টি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু নতুন এই গবেষণার গবেষকরা মনে করছেন আগের গবেষণাগুলো থেকে প্রাপ্ত ফল সঠিক নয়।
দ্বিতীয় গবেষণাটি ঘুম আর ওজন নিয়ে। এই গবেষণার ফল হলো_ কম ঘুমের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টিয়ান বেনেডিক্ট। বেনেডিক্ট ও তার সহযোগী গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন ছাত্রের ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় পর্যবেক্ষণ করেছেন। স্বল্প ঘুম, একেবারে না ঘুমানো ও স্বাভাবিক ঘুমের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ, বিপাক প্রক্রিয়া, হরমোনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। গবেষণাটির ফল অনুযায়ী যারা ৫ ঘণ্টা বা তারও কম ঘুমান তাদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে। কম ঘুমের কারণে কম ক্যালরি খরচ হয়। এর ফলেই ওজন বেড়ে যায়।
দুটি গবেষণার ফল নিয়েই অন্য এক ধরনের ভাবনা এলো। অভিজ্ঞতায় দেখেছি উচ্চশিক্ষিতদের নানা কারণে রাত জাগতে হয়। পরীক্ষার আগে রাত জাগা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। বেশি রাত জাগলে ওজন বাড়বে। একটি গবেষণা রয়েছে, বেশি ওজনের লোকদের আয়ু কমে যায়। যুক্তিবিদ্যার সরলরৈখিক যুক্তি মেলালে এটি রাত জাগা শিক্ষার্থীদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। অথচ অন্য আরেকটি গবেষণা বলছে, বেশি শিক্ষিত লোকেরা বয়স্ক হয় দেরিতে। এসব গবেষণা মেলালে তো গোলমেলে অবস্থায় পড়তে হয়। তার চেয়ে বরং আরেকটা গবেষণার জন্য অপেক্ষা করাই ভালো।
 

No comments

Powered by Blogger.