মিসরের ক্ষমতাকেন্দ্রে আবারও অস্থিরতা

পার্লামেন্ট পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে মিসরের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির জারি করা (ফরমান) অধ্যাদেশকে গত মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত বাতিল ঘোষণা করেছেন। এর আগে গত রোববার মুরসি বিলুপ্ত-ঘোষিত পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র আট দিনের মাথায় এ পদক্ষেপ নেন তিনি। এরপর মঙ্গলবার পার্লামেন্টের এক সংক্ষিপ্ত অধিবেশনও বসে।
কিন্তু ওই অধিবেশন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আদালত নতুন এক আদেশে প্রেসিডেন্টের জারি করা ফরমান বাতিল করে নিজেদের দেওয়া আগের আদেশই বহাল রেখেছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদালতের সর্বশেষ এই আদেশের পর মিসরের ক্ষমতাকেন্দ্রে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতার কর্তৃত্ব নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কাউন্সিল অব আর্মড ফোর্সেস (স্কাফ) মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
আদালতের আদেশের পর পরই তাহরির স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। তারা এ সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
মিসরের প্রখ্যাত ভাষ্যকার ও লেখক আলা আল-আসওয়ানি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ওই সাংবিধানিক আদালতের বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা নতুন প্রেসিডেন্ট মুরসির জারি করা ফরমান বাতিল করে ফিল্ড মার্শালের (স্কাফের প্রধান হুসেইন তানতাওয়াই) জারি করা আদেশ বহাল রাখলেন।
আলা আল-আসওয়ানি বলেন, এই আদেশের অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীকে বাদ দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ বা ব্যবহার করতে পারবেন না।
আদালতের নতুন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মিসরের ওফাদ পার্টির মুখপাত্র আল-ওফাদ লিখেছেন, ‘সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্টকে চপেটাঘাত ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ ওফাদ পার্টির এমপিরা মঙ্গলবারের পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দেননি।
এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিসরের ক্ষমতাসীন সুপ্রিম কাউন্সিল অব আর্মড ফোর্সেস এক সাংবিধানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এতে সেনাবাহিনীকে আইন প্রণয়নের অধিকার, সামরিক যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, বাজেট তৈরি ও নতুন সংবিধান রচনায় ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্কাফের ওপর সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। স্কাফের সদস্য নিয়োগ ও অনুমোদনের ক্ষমতাও তাদের হাতে থাকবে। এমনকি স্কাফের অনুমতি ছাড়া সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
অন্যদিকে মিসরের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত গত মাসে রায় দেন, যে আইনে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে, তার নির্দিষ্ট কিছু ধারা অবৈধ ছিল। ওই রায়ের মাধ্যমে নির্বাচিত পার্লামেন্টকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্কাফ ওই পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
এদিকে মিসরে ক্ষমতা নিয়ে এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জানাতে আগামী শনিবার তিনি কায়রো সফরে যাচ্ছেন। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.