শেয়ারবাজার-উদ্যোক্তা পরিচালক ও আইসিবির সক্রিয়তায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী

পুঁজিবাজারে লেনদেনে গতকাল বুধবার শুরুটা হয়েছিল সূচক পতনের মধ্য দিয়েই। টানা কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন প্রথম দুই ঘণ্টায় সূচকের পতন হয় ১৫০ পয়েন্ট। কিন্তু এর পরই বাজার নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।


ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও উদ্যোক্তা পরিচালকরা বাজারে সক্রিয় হয়ে ওঠাই এর নেপথ্য কারণ বলে জানা গেছে। এদিকে টানা দরপতন ও হঠাৎ বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতির নেপথ্যে বড় ধরনের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর।
গতকাল পতন শেষে হঠাৎ বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পর শেষ এক ঘণ্টায় সূচকে যুক্ত হয় পড়ে যাওয়া ১৫০ এর সঙ্গে আরো ২৩৮ পয়েন্ট। লেনদেন শেষ হয় ৮৮ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। দিনশেষে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৪০৭৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে এমন নাটকীয় ওঠানামা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণই এর নেপথ্য প্রধান কারণ বলে শনাক্ত করেছেন তাঁরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাউথইস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংকসহ কয়েকটি বীমা কম্পানির ১০ উদ্যোক্তা পরিচালক ও পাবলিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের পক্ষে ১৬ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা আসে ডিএসইর ওয়েবসাইটে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এই অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। সঙ্গে সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইসিবির শেয়ার কেনার খবর চাউর হয় বাজারে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার পরিস্থিতির ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠানের খবরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরে আসে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার লেনদেনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে এডিবির প্রতিনিধি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে যেকোনো একটি ইস্যুকে সামনে রেখে যারা দরপতন ঘটায় তারাই এই বৈঠকের খবর কাজে লাগিয়ে গতকাল হঠাৎই দর বৃদ্ধি ঘটিয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। এ ছাড়া অধিকাংশ কম্পানির শেয়ারের দর মৌলভিত্তির অনেক নিচে নেমে আসায় সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন সতর্ক বিনিয়োগকারীরা। দর একটু উঠতে শুরু করায় তাঁরা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
গতকাল সূচক ১৫০ পয়েন্ট পতনের পর যখন দর বৃদ্ধির তালিকায় মাত্র চারটি কম্পানির নাম ভেসে ওঠে ডিএসইর ওয়েবসাইটে তখন সতর্ক বিনিয়োগকারীদের যেন তর সইছিল না। এ সময় শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের এক বিনিয়োগকারীকে ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনতে দেখা যায়। তাঁর চোখে-মুখে দেখা গেছে কম দামে শেয়ার কিনতে পারার তৃপ্তি।
কাজী ফিরোজ রশীদ সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিল মাশরুর মিলার গতকালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এরকমটা আগে দেখিনি। কোনো একটি চক্র হয়তো কয়েক দিন ধরে জোর করে বাজার টেনে নিচে নামিয়েছে। পতনের বাজারে তারা হঠাৎ শেয়ার কেনা শুরু করেছে। কিনে তারা লাভবান হবেন। আর নিঃস্ব হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।' মিলার বলেন, বুধবারের বাজারে কয়েকটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও পাবলিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের শেয়ার কেনার ঘোষণায় হঠাৎই বেড়ে যেতে থাকে গত কয়েক দিনে দর হারানো কম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। তিনি বলেন, এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনেছে। ফলে হঠাৎই ঘুরে যায় বাজার।
১৯৮২ সাল থেকে শেয়ার লেনদেন করেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, 'গত কয়েক দিনে বাজারে যা ঘটেছে তা আগে কখনো দেখিনি। বড় ধরনের কারসাজি চলছে। বাজারের যেন কোনো অভিভাবক নেই।'
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান বলেন, 'অব্যাহত দরপতনের কারণে বিভিন্ন কম্পানির শেয়ারের দাম বেশ আকর্ষণীয় অবস্থানে চলে এসেছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে সঠিক রোল প্লে করা।' তিনি বলেন, 'আমরা বাজারে সক্রিয় রয়েছি। অন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও সক্রিয় হওয়া উচিত।'
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে. গতকাল সারা দিন এই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২২৮টির, কমেছে ২৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির। এ ছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৩টির এবং কমেছে ৪৯টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি শেয়ারের দাম।

No comments

Powered by Blogger.