নকল এইচএসসি পরীক্ষা-অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

সদ্য সমাপ্ত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার উত্তরপত্র নতুন করে লেখানোর চেষ্টার অভিযোগে রংপুরে কলেজ শিক্ষকসহ সাতজনকে গ্রেফতারের সংবাদটি গত শুক্রবার দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, অর্থের বিনিময়ে উত্তরপত্র পাল্টে দেওয়ার ঘটনা এখানে অতীতেও ঘটেছে।


বিস্ময়কর হলো, এই নীতিবিগর্হিত, অপরাধমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করেছে একশ্রেণীর অর্থলোভী শিক্ষক। সাধারণত, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজির ফল নিয়েই উৎকণ্ঠিত থাকে বেশি। তাই এই বিষয়ের পরীক্ষার ফল সুবিধাজনক করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। আর এই সুযোগটিই এত দিন গ্রহণ করে আসছিলেন একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষক। তবে এত বড় জালিয়াতির ঘটনায় কেবল পরীক্ষা ও খাতা দেখার সঙ্গে একশ্রেণীর শিক্ষকই শুধু জড়িত নয়, এর সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ও বোর্ডের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মর্চারীর যোগসূত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, যেসব শিক্ষক নতুন করে খাতার ব্যবস্থা করেন তারা সেগুলো কোত্থেকে জোগাড় করেছেন_ সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন। আর খাতাগুলো যদি নকলও হয়ে থাকে, তারপরও এগুলো বোর্ডে গছিয়ে দেওয়ার সময় তো কোনো না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তা লাগবেই। তাই এহেন অপরাধমূলক কাজ সংঘটনের জন্য একটি চক্রের কাজ করাই স্বাভাবিক। এই গোটা চক্রটিকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। এটা ঠিক যে, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নকলপ্রবণতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এটা পূর্বাপর সরকারগুলোর লাগাতার প্রচেষ্টার ফল। তবে এখনও বিভিন্ন উপায়ে ফলকে প্রভাবিত করা ও পরীক্ষার খাতা যারা দেখেন তাদের মধ্যে একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষককে ধরে অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্তব্য নম্বর বাড়িয়ে নেওয়ার অসাধু ব্যবস্থা গোপনে ক্রিয়াশীল। কিন্তু উত্তরপত্র নতুন করে লিখিয়ে নিয়ে নম্বর বাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনা এক্ষেত্রে নবতর সংযোজন বলতে হবে। প্রশ্ন হলো, এই অসাধু ব্যবস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও প্রশাসন এতদিন এটা ধরতে পারা দূরে থাক, আঁচ পর্যন্ত করতে পারেনি কেন? আমরা এভাবে উত্তরপত্র নতুন করে লিখিয়ে নিয়ে নম্বর বৃদ্ধি করার অপচেষ্টাকে গুরুতর অপরাধ বলে মনে করি। এটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও দুর্নীতিমুক্ত করার সরকারি অঙ্গীকারেরও বিরোধী। শিক্ষাকে কলুষমুক্ত করার স্বার্থেই যেসব শিক্ষক এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.