বাজারদর ও মনিটরিং-কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই

যে আশঙ্কা করা হয়েছিল এক মাস আগে, সেটাই সত্য প্রমাণিত হলো। রোজার আগেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও সেখানে নিয়ন্ত্রণ নেই। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নিজেদের মতো করে পণ্যের দাম বাড়াতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে।


সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির হিসাব অনুযায়ী গত শনিবার বাজারে নতুন করে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। অন্যদিকে এবার রোজার আগেই বাজারে নেমেছে টিসিবি। সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে বিপণন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারলে একটি বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। সে ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্র কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে- এমন আশা করা যেতে পারে। তবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যদি পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়, তাহলে তো ভোক্তাসাধারণকে ভোগান্তির শিকার হতেই হবে।
রমজান উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখনো রাজধানীর সব এলাকার দোকানে পণ্যমূল্য তালিকা টাঙানো হয়নি। বাজার মনিটরিংয়ের কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। তবে খোলা ট্রাকে করে কম দামে চার পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। গত শনিবার থেকে এই কার্যক্রমে সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। টিসিবি দাবি করেছে, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ও চট্টগ্রামের পাঁচটি এবং অন্য বিভাগগুলোর দুটি করে স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। সরকারের এ ব্যবস্থা বাজারকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বরাবর লক্ষ করা যায়, বাংলাদেশের বাজারে একবার কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেলে তা আর কমে না। উৎসব-পার্বণের সময় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতাই বেশি। নানা উপলক্ষ সামনে রেখে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। শবেবরাত, রোজা, ঈদ ইত্যাদি যখনই আসে তখনই বাজারে জিনিসপত্র অগ্নিমূল্য হয়ে যায়। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোজার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। রোজার আগে সরকার কিছু নিত্যপণ্যের দাম স্থির করে দেয়। এ ক্ষেত্রে এবার ব্যবসায়ীদের কারসাজি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গরুর মাংসের দাম বর্তমান বাজারদরের চেয়ে যেমন বেশি ধরা হয়েছে, তেমনি বিএসএফআইসির চিনির দামও বাজারদরের চেয়ে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ঘোঁট পাকাতে সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ী চক্র।
এবার রোজার আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি টিসিবি এবার রোজার আগেই বাজারে নেমেছে। একটি বিকল্প বাজার সারা বছরের জন্য ব্যবস্থা করা গেলে বাজার কারসাজি-চক্রের সব চক্রান্ত নস্যাৎ করা যেত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে টিসিবিকে সক্রিয় করা হচ্ছে না। এবার রোজার মাসে টিসিবি ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিকল্প বাজার হিসেবে কাজ করবে। এই বিকল্প সারা দেশে নিয়ে যেতে পারলে ভোক্তাদের জন্য সেটা কল্যাণকর হতো।
বরাবর বলে আসা হয়েছে, বাজার সহনীয় রাখতে বিকল্প ব্যবস্থার পাশাপাশি বাজার মনিটরিং জরুরি। কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা গেলে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দূরদৃষ্টি ও সদিচ্ছা। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট মহল সদিচ্ছার প্রমাণ রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.