নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার-সংলাপে বসে সমঝোতা হোক

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচারাভিযান ব্যয় (জনতহবিল), আইন-২০১১ প্রণয়নসহ নির্বাচন পদ্ধতির আরও সংস্কার ও উন্নতি সাধনের যেসব প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রণয়ন করেছে তাকে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষই স্বাগত জানাবে বলে আমরা মনে করি। সামরিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনামলে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন মহলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে


পরিণত হয়েছিল। এরপর অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। নির্বাচন কমিশনও নিজের অবস্থান ক্রমে সংহত করছে। এ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ করার দাবি এখন প্রকৃতপক্ষে জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের প্রস্তাবগুলো কার্যকর করা হলে এ ধারায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে তাতে সন্দেহ নেই। কমিশনের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে_ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর সংশোধন, নিবন্ধনকৃত যেসব রাজনৈতিক দল পূর্ববর্তী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ছিল এমন নির্বাচনী এলাকায় মোট প্রদত্ত ভোটের নূ্যনতম ৫ শতাংশ পাবে তাদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য ব্যয় বহনার্থে তহবিল প্রদান, এফিডেভিটে তথ্য গোপন কিংবা ভুল তথ্য প্রদান করা হলে প্রার্থীর ফল বাতিল, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন চালু, নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা, আইন ভঙ্গ করার কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল, নির্বাচনের দিনে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ভোটকেন্দ্রের চারশ' গজের মধ্যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি। নির্বাচন শেষে প্রতিটি দল ও প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে তাদের ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব প্রদান করবে এবং কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল অফিস তা নিরীক্ষণ করবে। কোনো দল কিংবা প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তহবিলের অপব্যবহার করলে সে সংক্রান্ত অভিযোগও নির্বাচন কমিশনে করা যাবে। নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সব প্রার্থীকে নিয়ে এক মঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠানেরও প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনী আইনে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। আমরা আশা করব, সব দল এতে অনুকূল সাড়া দেবে। উলি্লখিত সব প্রস্তাবে সব দল পুরোপুরি একমত হবে, এমন কথা নেই। এমনকি কোনো কোনো প্রস্তাবে সম্মিলিত আপত্তিও উঠতে পারে। কিন্তু আমরা চাইব, এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক। রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের তরফে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এটি জনপ্রত্যাশার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচনকালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দেশের শাসনভার অর্পণের প্রয়োজন নেই বলে যে অভিমত তা এভাবেই বাস্তবে রূপ পেতে পারে। বল এখন বলা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে। পরপর কয়েকটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনের সময় কমিশন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাকালীন সময়ের তুলনায় যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে, কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকেই সামনে এসেছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে রয়েছে তারই প্রতিফলন। এসব প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে তাদের যা বক্তব্য সেটা নির্বাচন কমিশনে গিয়েই বলা উচিত। কমিশন প্রত্যেকের মত পৃথকভাবে যেমন শুনবে, তেমনি সম্মিলিত বৈঠকেরও আয়োজন করা যেতে পারে। রাজনৈতিক দলের বাইরেও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলে সেখানেও মিলতে পারে সুপরামর্শ।
 

No comments

Powered by Blogger.