আহত ৩৫, ইটপাটকেল ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ-বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবির মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা

নারায়ণগঞ্জে বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে বিআরটিসির ননএসি বাস চালুসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের ওপর বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পুলিশ এই হামলা চালায়। এ সময় আন্দোলনরত ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ছোড়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল।


এসব ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্যসহ ৩৫ জন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার, নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়া পুল থেকে বিআরটিসির বাস চালু, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো পথে (পঞ্চবটী-পাগলা) বিআরটিসির বাস চালু, নারায়ণগঞ্জ-কমলাপুরে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু, ট্রেনে বগির সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রতি ঘণ্টায় রেল সার্ভিস চালুসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার কথা ছিল যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের। এ উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টার দিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন ফোরামের নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। তারা শহীদ মিনারে ঢুকে এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করে। অনেককে মাটিতে ফেলে পেটায় পুলিশ। ছোড়ে কাঁদানে গ্যাসের তিনটি শেল। এ সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা।
এ সময় পুরো চাষাঢ়া এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট, যানবাহন চলাচল। সান্ত্বনা মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্পাদক হিমাংশু সাহাকে মাটিতে ফেলে লাঠিপেটা করে পুলিশ।
লাঠিপেটায় আহত হন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সিপিবির শহর কমিটির সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, খেলাঘরের নেতা ফারুক মহসিন, কবি ফাহমিদা আজাদ, সাংস্কৃতিক কর্মী স্মৃতি চক্রবর্তীসহ ৩০ জন। ইটের আঘাতে আহত হন চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক তোবারক আলীসহ পাঁচজন।
পরে আহত নেতা-কর্মীরা চাষাঢ়া বেইলি টাওয়ারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন।
শহীদ মিনারে ঢুকে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম।
ফোরামের নেতারা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার এবং হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। নয়তো হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
লাঠিপেটার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের বলেন, ওপরের সিদ্ধান্ত ছিল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা যাবে না। তবে তাঁরা কয়েকজন গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করতে পারবেন। কিন্তু তাঁরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘লাঠিপেটার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনো পুলিশ কর্মকর্তার অতি উৎসাহী আচরণের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, খতিয়ে দেখছি।’

No comments

Powered by Blogger.