ঘাটাইল টাঙ্গাইল: বিএনপি-ঐক্যের পাল উড়ছে

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা বিএনপিতে ঐক্যের পাল উড়ছে। দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে নেতাকর্মীরা ক্রমেই চাঙা হচ্ছেন। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে ঘাটাইলের সাবেক এমপি লুৎফর রহমান খান আজাদের নিয়মিত যোগাযোগ সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করছে। শক্তিশালী হয়ে উঠছে সাংগঠনিক ভিত্তি। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-কোন্দল চরম রূপ নেওয়ার ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে বিএনপিতে।


নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সেটা ব্যক্তি পর্যায়ে রয়েছে এবং তাতে দলীয় কর্মকাণ্ডে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি করেন কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতারা।
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলন থেকে পরবর্তী সময়ে ঘাটাইলে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। তারপর ১৯৯১, '৯৬-এর দুটি নির্বাচন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ এমপি নির্বাচিত হন। তিনি একাধিকবার মন্ত্রিত্বও লাভ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে উপজেলায় উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনি কখনো নিয়োগ-বাণিজ্য করেননি বলে শুধু তার দলের নেতা-কর্মীরা নন, 'আওয়ামী লীগেরও কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কেবল বিরোধিতার জন্য বিরোধ নয়। তিনি (সাবেক এমপি) কখনো কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাণিজ্য করেছেন বলে আমার জানা নেই।'
তবে ২০০৪ সালের দিকে ঘাটাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইটিসিএলের (বর্তমানে সংস্থাটি বিলুপ্ত হয়েছে) শতাধিক একর জমি কৌশলে নামমাত্র মূল্যে কিনেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ জন্য তিনি ওই সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও এ নিয়ে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেকে অভিযোগ করেন, সেই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী নির্বাচনে। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। অবশ্য প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায়ই জমিটি কেনা হয়েছিল বলে লুৎফর রহমান খান আজাদ দাবি করেন।
২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। এরপর দুই-একজন উল্টো পথে চললেও বাকিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে নিতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দলীয় প্রায় সব কর্মসূচিতে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাধা, হামলা হওয়ায় নেতা-কর্মীরা মাঠে বেশি সময় অবস্থান করতে পারেন না।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম খান জানান, গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তখন বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেছেন। এতে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মনোবল আরো দৃঢ় হয়েছে। তারা অনেক উজ্জীবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, দলের ভেতর এখন উল্লেখ করার মতো কোনো কোন্দল নেই। দল অনেক চাঙা, অনেক শক্তিশালী। তার কথার সূত্র ধরে দলের সভাপতি সিরাজুল হক ছানা বলেন, 'পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে দুটি নির্বাচনেই দুটি কেন্দ্রের ফল স্থাগিত রেখে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপির ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের অবস্থান শক্ত করলে তারা (আওয়ামী লীগ) মাঠে টিকতে পারবে না। তবু আমরা সেদিকে যাইনি। কারণ আমরা সংঘাত করতে চাই না।' দলের বর্তমান অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক দিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে সে ভিত্তি আরো মজবুত হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.