দুজনার একই স্বপ্ন by সৌরভ রাহমান

বীন নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে আনিকা-তুষার এরই মধ্যে বেশ নাম করেছেন। লিখেছেন সৌরভ রাহমান
নৃত্যশিল্পী আনিকা ও তুষারের ফটোসেশন হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। রোদের তীব্রতায় ছবি ওঠানো দায়। কিন্তু ফটোসেশনের মুহূর্তটা জমে উঠল তাঁদের স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে। আশপাশের লোকজনও মজা পেল।


যাঁদের নাচ মঞ্চে ঝড় তোলে, তাঁদের দেখে ছোটখাটো একটা জটলা হবে না, তা কি হয়? ধীরে ধীরে দর্শকসংখ্যা বাড়তে লাগল। এ ঘটনার সঙ্গে আনিকা ও তুষারের নাচের ক্যারিয়ারের মিল আছে অনেকখানি। ২০০৭ সালে এটিএন বাংলায় ঈদের বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁদের যুগল নাচের সূচনা। শুরুতেই তাঁরা নৃত্যপ্রিয় দর্শকদের সুনজরে পড়েন। এরপর বিভিন্ন জাতীয় দিবসের বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানে তাঁরা একসঙ্গে খণ্ডনৃত্য করেছেন। ২০০৮ সালে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে এটিএন বাংলায় 'সামান্য ক্ষতি' নৃত্যনাট্যে রাজা-রানির ভূমিকায় অংশ নেন। একই বছর তাঁরা নৃত্য পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। বিটিভির বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশাপাশি যুগল নাচের জন্য ডাক পায় আনিকা-তুষার। নিজেদের পরিচালনায় একটি কনটেম্পরারি নৃত্য পরিবেশন করেন তাঁরা। নাচটি টিভিতে প্রচারিত হওয়ার পর শুভাকাঙ্ক্ষী ও নৃত্যবোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা নিজেদের কোরিওগ্রাফিতেই সব খণ্ডনৃত্য করেছেন। ধীরে ধীরে তাঁদের দর্শকপ্রিয়তা বাড়ে। গেল বছর নিউ ইয়র্কে নিজেদের কোরিওগ্রাফিতে ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স আয়োজিত নৃত্য উৎসবে 'মি. মাইসেলফ অ্যান্ড আই' শীর্ষক খণ্ডনৃত্য পরিবেশন করে প্রশংসিত হন। আনিকা-তুষার একসঙ্গে বহু নাচ করলেও তাঁদের মধ্যে জুটি গড়ে ওঠেনি। আনিকা বলেন, 'জুটি হিসেবে নাচ করলে অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা আমার লক্ষ্য না। আমি অনেক কাজ করতে চাই। সে ক্ষেত্রে জুটি অনেকটা অন্তরায়।' তুষারের ভাষ্য প্রায় একই। নৃত্যাঙ্গনে আনিকা-তুষারের শক্ত অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি। অর্জন করতে হয়েছে তিল তিল করে। তিন বছর বয়সে মুনমুন আহমেদের কাছে নাচে হাতেখড়ি হয় আনিকার। ১১ বছর তাঁর কাছে কত্থক শিখেছেন তিনি। ব্যক্তিগতভাবে কত্থক শিখেছেন তাবাস্সুম আহমেদের কাছে। আর তুষারের হাতেখড়ি [লোকনৃত্যে] শিশু একাডেমীতে হাবিবুল্লা চৌধুরীর কাছে। বুলবুল একাডেমীর সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করে দুজনেই ভরতনাট্যম শিখেছেন বেলায়েত হোসেনের কাছে। তুষার কত্থক শিখেছেন নৃত্যাঞ্চলে শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নিপার কাছে। তালিম নিয়েছেন ভারতীয় নৃত্যগুরুদের কাছ থেকেও। ২০০৩ সাল থেকে পণ্ডিত কৃষান মোহন মিশ্রার কাছে কত্থক নাচে তালিম নিচ্ছেন আনিকা। আর তুষার নৃত্যগুরু সিভি চন্দ্র শেখরের কাছে ভরতনাট্যম নৃত্য তালিম নিয়েছেন তিন বছর। তুষার নৃত্যাঞ্চলের সদস্য হিসেবে শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা, মহুয়া, শকুন্তলা তিন কন্যাদান, বাল্মীকি প্রতিভা প্রভৃতি নৃত্যনাট্যে অংশ নিয়ে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
আর আনিকা শিল্পকলা একাডেমী, মুন্সীগঞ্জ, বনানী প্রভৃতি স্থানে দেড় ঘণ্টা ধরে একক কত্থক নৃত্য পরিবেশন করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। নাচ ছাড়াও আনিকা-তুষার দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে অভিনয়টা একেবারেই মায়েদের ইচ্ছায়। নাচই তাঁদের ধ্যান-জ্ঞান। নাচ নিয়ে দুজনের স্বপ্নও একই। বাংলাদেশের নৃত্যকে বিশ্ব দরবারে উঁচু আসনে আসীন করার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.