ঘাটাইল টাঙ্গাইল: আওয়ামী লীগ-খাঁচায় বন্দি বাঘ শিয়াল পাহারাদার by অরণ্য ইমতিয়াজ

ঞ্চনা ও লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে চলছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলের ভেতর গড়ে উঠেছে আরেক দল। মূল দলের উল্টো পথে চলছে এটি। ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতারা মূল দলের সঙ্গে থাকলেও কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে এগুতে পারছেন না। নতুন এবং 'আনাড়ি' নেতারাদের দাপটে তাঁরা কোনো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। স্থবির হয়ে পড়েছে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ।


দলের ভেতর 'স্টিয়ারিং কমিটি' নামে আরেক দলের নেতারা এমপির আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই অনিয়ম-দুর্নীতির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন বলে সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ। তাঁদের অনেকে অভিমানে দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলের বাইরে থেকে 'অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে' মনোনয়ন দেওয়ার ফলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ঘাটাইল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে 'গণবিস্ফোরণ' ঘটবে বলেও নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা।
দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘাটাইল আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ছিল। নির্বাচনের সময় তিনবারের এমপি নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান খান শাহজাহানসহ কয়েকজন তৃণমূলের নেতা-কর্মীর কাছে মনোনয়নের সমর্থন দাবি করেন। শামসুর রহমান খান শাহজাহান তাঁদের সমর্থন লাভ করেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সে সমর্থন উপেক্ষা করে ঘাটাইল রাজনীতিতে 'নতুন মুখ' ডা. মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নিজেদের সমর্থন না থাকলেও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সাধারণ নেতা-কর্মী ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন। বিপুল ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মতিউর রহমান। কিন্তু তার পরই তিনি দলকে মাইনাস করে তাঁর নিজস্ব কয়েকজন লোক দিয়ে 'স্টিয়ারিং কমিটি' নামে আরেকটি দল গড়ে তোলেন। সৃষ্টি হয় উপদলীয় কোন্দল। ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ, 'স্টিয়ারিং কমিটির সবাই নব্য আওয়ামী লীগার। তাঁদেরকে নিয়েই কাবিখা, টিআরসহ উন্নয়নকাজের নামে চলে প্রকল্পের ভাগবাটোয়ারা।
এই বঞ্চনাই ধীরে ধীরে চরম ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ এবং মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বিভক্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। তারপর গত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল চরম রূপ নেয়। এমপি ডা. মতিউর রহমান তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম লেবুকে সমর্থন দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সিনিয়র নেতারা। প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম খান সামু বিজয়ী হন।
সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপির লোকজন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে 'সমর্থন-বাণিজ্য' করেন। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় 'স্টিয়ারিং কমিটি'র সদস্যদের। তাঁদের প্রভাব বিস্তারের কারণে পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত এবং পরবর্তী সময়ে সে কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি কেন্দ্রসহ পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে এমপি ডা. মতিউর রহমান সমর্থিত কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। এমপির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীরা এ পর্যন্ত পাঁচবার তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন বলেও দলের অনেক সিনিয়র নেতার অভিযোগ।
বর্তমানে ঘাটাইল আওয়ামী লীগে দলীয় শৃঙ্খলা নেই। সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। এ অভিযোগ স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজমল হোসেন বলেন, দলে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কোনো ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। সরকার বা দলীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা হচ্ছে। এতে ব্যক্তিরা ব্যাপক লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল।
ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভীষণ হতাশ প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আবদুর রশিদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'দলে সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন নেই। নব্য আওয়ামী লীগারদের আমদানি হয়েছে। তাঁরা রাজনীতিকে ব্যবসা বানিয়েছে। ঘাটাইলে রেকর্ড পরিমাণ চুরি, লুটপাট হচ্ছে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। ঘাটাইল আওয়ামী লীগের অবস্থা হলো_ 'বাঘেরা খাঁচায় বন্দি, শৃগাল পাহাদার।'

No comments

Powered by Blogger.