স্বপ্নদেখা দিনে

শিল্পের নানা মাধ্যমে বিচরণের যোগ্যতা অনেক শিল্পীর মধ্যেই থাকে। তারা আপন যোগ্যতায় জায়গা করে নেন। শিল্পীর অপূরণীয় শিল্পতৃষ্ণাই তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বয়সের বিচারে মোনালিসা তরুণী; কিন্তু তার কাজের মান ও প্রতিভা স্বীকৃত। পর্দায় তার স্বল্প উপস্থিতিও অনুরাগীদের মধ্যে আলোড়ন তোলে। তাকে নিয়ে লিখেছেন মীর সা কেন যেন আজ ফেলে আসা দিনগুলোকেই শুধু মনে পড়ে মোনালিসার। তার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সেই সুখের সাত সমুদ্দুর।


'তখন আমার কোনো ধরনের টেনশন ছিল না। ছিল না বাধ্য হয়ে কিছু করার মতো মন। ছিল নির্মল আনন্দের সময়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার পুরো কৈশোর যদি আবার ফিরে পেতাম, তাহলে কতই না মজা হতো। আর রাত্রির নির্জনতায় যখন আমার কৈশোরের স্মৃতি ভিড় করে, তখন ছোটবেলার নানা কাজকর্ম চোখের সামনে ভাসতে থাকে। তখন ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সেই সোনালি দিনগুলো। পরিবারের সঙ্গে নির্ভাবনায় কাটানো সে সময়গুলো।' পৌষের এক পড়ন্ত বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নিজের ফ্ল্যাটে বলছিলেন তিনি।
বসার ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশটা দেখা যায়। সেদিকে তাকিয়ে মোনালিসা আনমনে বলেন, 'যখন সেই ফুল কুড়ানোর দিন, তখন থেকেই আমার নাচ আর অভিনয়ের তৃষ্ণা। আজ পেছনে ফিরে তাকালেই সেই শৈশবের নানা স্মৃতি মনে দোলা দিয়ে যায়। দেখতে পাই আমার ছোটবেলা আর কাঁপা কাঁপা পায়ে ছোট্ট মোনালিসা মঞ্চে কোমর দুলিয়ে নেচে যাচ্ছে। 'মম চিত্তে গীতি নৃত্যে, তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ' গানটি কখন আমার মনের মধ্যে গেঁথে গেছে জানি না। সেজন্যই ভেবেছি এ বছর নতুন কিছু করব।' সেটা কী? প্রশ্নটা শুনতেই তার মুখে চেনা হাসি। তারপর বললেন, 'এ বছর পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে। তবে কোন মাধ্যমে পরিচালক হব তা এখনও চূড়ান্ত করিনি। আমাদের দেশে এখন অনেক টিভি চ্যানেল এসেছে। সামনে আরও অনেক টিভি চ্যানেল আসছে। আমি নতুন ও পুরনো অনেক টিভি চ্যানেলের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। প্রথমে নাচ নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা আছে। ফলে পর্যাপ্ত বাজেট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি, সেটা পেলেই পরিচালনায় আসব।'
মডেলিং আর অভিনয়ে প্রায় ১৫ বছর পেরিয়েছেন মোনালিসা। এত লম্বা সময় ধরে জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখার রহস্য কী? 'সেই ১৯৯৭ সাল থেকে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছি। দেখতে দেখতে যে প্রায় ১৫ বছর পার হয়ে গেছে তা ভাবলে অবাক লাগে। জনপ্রিয়তা ধরে রাখার কোনো রহস্য আমার জানা নেই। তবে সবসময় মন দিয়েই সব কাজ করার চেষ্টা ছিল আমার। কাজের প্রতি সবসময়ই আন্তরিক ছিলাম, আছি এবং থাকব। মডেল বা অভিনেত্রী হিসেবে আমার আজকের যে অবস্থান তার সবই দর্শক ও ভক্তদের জন্য। পাশাপাশি যারা আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। কারণ নিজেকে উপস্থাপনের জন্য তারাই আমাকে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। সেজন্য দর্শক আমাকে ভালো ভালো কাজে পেয়েছে। তবে নিজের কাজ নিয়ে এখনও আমি তুষ্ট নই। বারবার মনে হয়, এখনও অনেক ভালো কাজ করা বাকি আছে। আরও মানসম্মত কাজ করতে চাই।'
গত বছরের শেষের দিকে মোনালিসা কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানে সনক মিত্রর নির্দেশনায় একটি সৌন্দর্য প্রসাধনী আর একটি টিভি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করেন। সেখানে টানা ১৫ দিন থাকার পর গত রোববার সকালে তিনি দেশে ফিরেছেন। এতদিন টানা কাজ করে তিনি কিছুটা ক্লান্ত। সেজন্য দেশে ফেরার পর ঘুম যেন তার পিছু ছাড়ছেই না! 'একটানা এতটা সময় কাজ করায় ঠিকমতো ঘুমানোর সুযোগ পাইনি। তাই আরও কয়েকটা দিন ঘুমিয়ে নিতে চাই। তাই অনেক নাটকের কাজ পিছিয়ে দিয়েছি।'
আগামী মাসে আবার একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজে ভারতে যাবেন মোনালিসা। এ ছাড়া সম্প্রতি বেশ ক'টি নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে 'মায়া' নামের এক পর্বের একটি নাটকে অন্ধ মেয়ের চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। 'অন্ধ চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমার ওপর বেশ ধকল গেছে। কারণ নিজেকে ক্যামেরার সামনে অন্ধ সাজাতে গেলে একদিকেই তাকিয়ে কথা বলতে হয়। এ কজাটা করতে গেলেই আমার চোখে জল চলে আসে। প্রথমে ভেবেছিলাম, অন্ধ চরিত্রে কাজ করা অনেক সহজ হবে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম এ কি! যা ভেবেছিলাম সব ভুল। চরিত্রটি অনেক কঠিন। স্বাভাবিক মানুষ হয়ে অস্বাভাবিক মানুষের ভূমিকায় এর আগে কাজ করলেও এমন ফাঁপড়ে কখনও পড়িনি। সারাক্ষণ একদিকে তাকিয়ে থাকা অনেক কঠিন কাজ।'
নাচের মোনালিসা কি হারিয়ে গেছে? তার সোজাসাপ্টা উত্তর, 'মোটেও না। বাসায় নিয়মিত নাচের চর্চা করি। উৎসব-পার্বণে নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি।'
আপনার বয়সী অনেক শিল্পী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। আপনার বিয়ের কী খবর? এ বছরই বিয়ের সানাই বাজবে? 'এ বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছি আমার পরিবারের ওপর। কাউকে না জানিয়ে লুকোচুরি করতে চাই না বিয়ে নিয়ে।'

No comments

Powered by Blogger.