‘আজি এ প্রভাতে রবির কর’ by মাহবুব তালুকদার

গুরুদেব যোগাসনে বসিয়া চক্ষু মুদিত করিয়া রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করিতেছিলেন। শিষ্য নিবিষ্টচিত্তে উহা শ্রবণ করিতেছিল। গুরুদেবের জলদগম্ভীর স্বরে আবৃত্তি যেন আবৃত্তি নহে, উহাকে মন্ত্রপাঠ বলিয়া মনে হইতেছিল। এক সময়ে গুরুদেব চক্ষু উন্মীলিত করিয়া শিষ্যের প্রতি দৃকপাত করিলেন। স্মিতহাস্যে কবিতার প্রথমাংশ তিনি পুনরায় আবৃত্তি করিলেনঃ
‘আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের ’পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান!
না জানি কেন রে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।’

অতঃপর গুরুদেব শিষ্যকে জিজ্ঞাসিলেন, কি বুঝিলে?
শিষ্য কহিল, ইহা কবিগুরুর একটি অসাধারণ কবিতা। এই কবিতার নাম ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’।
কেন কবিগুরুর এই স্বপ্নভঙ্গ হইয়াছিল তাহা বলিতে পার কি?
প্রভু! কবিগুরু এক সকালে অনুভব করিলেন সূর্যের আলো যেন তাহার অন্তরের ওপরে আসিয়া ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তিনি অনুভব করিলেন গুহার অন্ধকারে প্রভাতপাখি গান গাহিয়া উঠিয়াছে। ইহাতে তাহার ঘুমন্ত প্রাণ জাগিয়া উঠিয়াছিল।
খামোশ! গুরুদেব নিজেকে আত্মস্থ রাখিতে না পারিয়া ক্ষুব্ধস্বরে বলিলেন, এই কবিতার মমার্থ তুমি উপলব্ধি করিতে পারো নাই। কবিতাটি কবিগুরু নিজেকে লইয়া রচনা করিয়াছিলেন ঠিকই, তবে ‘রবির কর’ বলিতে রবীন্দ্রনাথ নিজের আয়কর বুঝাইয়াছেন, সূর্যের আলোকরশ্মি নহে।
শিষ্য করজোড়ে কহিল, স্যার! আমার ধারণা হইয়াছিল কবিগুরু সূর্যের আলো দেখিয়া—
ভুল, সবই ভুল। গুরুদেব বাধা দিয়া বলিলেন, কবিগুরু রাজস্ব বোর্ড তথা আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়া কবিতাটি লিখিয়াছিলেন। এই কবিতা রচনার পূর্বে রবীন্দ্রনাথ আয়কর দিতেন না। কিন্তু আয়কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যখন তাহাকে আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করিয়া বুঝাইল, সম্মানিত আয়করদাতা হিসাবে গৌরব অর্জন করার মওকা পরিহার করা উচিত নহে, তখন কবিগরুর মধ্যে আয়কর প্রদানের নিমিত্ত যে আবেগ উথলাইয়া উঠিয়াছিল, এই কবিতায় তাহাই ধারিত হইয়াছে।
প্রভু! আমার অপরাধ মার্জনা করিতে আজ্ঞা হয়। শিষ্য জানাইল, রাজস্ব বোর্ড বা আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা কাহাকেও উদ্বুদ্ধ করে না, আয়কর প্রদান না করিলে তাহার বিরুদ্ধে মামলা করিয়া তাহাকে জেলে ঢুকায়। আয়কর ফাঁকি দেয়ার মামলা জামিনযোগ্য হয় না। বিশেষ আদালতে বিচারকার্য আরম্ভ না হইলেও ওই সময়ে সকলকেই জেলের ভাত খাইতে হইয়াছিল।
বত্স! তুমি ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের জরুরি অবস্থার ঘোরে এখনও আবদ্ধ রহিয়াছ। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে কর ফাঁকির মামলায় মাত্র একজনের সাজা হইয়াছিল বলিয়া শুনিয়াছি। কিন্তু জরুরি অবস্থার সময় অসংখ্য রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাকে কর ফাঁকির জন্য কারাগারে রাখা হইয়াছিল। বর্তমান অবস্থা আর ঐরূপ নাই।
শিষ্য জানিতে চাহিল, বর্তমান অবস্থা কি রূপ?
রাজস্ব বোর্ড এক্ষণে রবীন্দ্রযুগে ফিরিয়া গিয়াছে। তাহারা এমপি সাহেবদের আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্সের ব্যবস্থা করিতেছে।
মহাত্মন! সংসদ সদস্যরা কি আয়কর ফাঁকি দেন?
ছি! ছি! উনারা আয়কর না দিলে তাহাকে কর ফাঁকি দেওয়া বলে না। গরুদেব কহিলেন, তোমাকে গোপনে বলিয়া রাখি—আয়কর দেন না কিংবা আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে হলফনামায় বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়াছেন, এইরূপ ৪২ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা না করার সিদ্ধান্ত লইয়াছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে বলিয়াছেন, ঐসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা না করিয়া বিকল্প চিন্তা করিতে হইতেছে।
কিন্তু সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করিতে অসুবিধা কোথায়?
বত্স! তোমার এখনও জরুরি অবস্থার ঘোর কাটে নাই। গুরুদেব জানাইলেন, নবম জাতীয় সংসদে বিজয়ী ৪২ জন এমপির হলফনামায় আয়কর সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গিয়াছে। ইহাদের মধ্যে আয়কর দেনই না, এমন সংসদ সদস্য ১৪ জন। কিন্তু—
কিন্তু কেন প্রভু? তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাইবে না কেন?
বাছা! ঐ ১৪ জনের ১১ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এই সংখ্যা উল্টা হইলে অর্থাত্ ১৪ জনের মধ্যে ১১ জন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য হইলে মামলা করিতে কোনো অসুবিধা ছিল না।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি এইরূপ পক্ষপাতিত্ব কি সমীচীন?
ইহাকে পক্ষপাতিত্ব বলা যায় না। গুরুদেব কহিলেন, সরকারদলীয় সদস্যের বিরুদ্ধেও যে আয়কর ফাঁকির মামলা হইতে পারে, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা উহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই মামলা করিয়া রাজস্ব বোর্ড নিরপেক্ষতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে।
মহাত্মন! রাজস্ব বোর্ড তো এমপি সাহেবদের বেলায় কর ফাঁকির জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্স করিতে যাইতেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের বেলায় সমআচরণ করে না কেন? তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় কেন? ইহা তো সমআচরণ নহে।
—সমআচরণ বলিতে তুমি কি বোঝ? সংসদ সদস্য ও সাধারণ মানুষ কি এক কথা হইল? তোমার কথাবার্তা শুনিয়া ধারণা হইতেছে, অচিরেই তুমি সাধারণ মানুষের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ির দাবি করিবে। এমপি সাহেবানদের ন্যায় তাহাদের জন্যও রাজউকের প্লটের আবদার করিবে।
স্যার! উভয়ের মধ্যে তো আকাশ ও পাতালের ব্যবধান।
মানে?
মানে সংসদ সদস্যগণ হইতেছেন আকাশ ও জনসাধারণ হইতেছে পাতাল।
খুবই সুন্দর কথা বলিয়াছ। গুরুদেব প্রসন্নকণ্ঠে কহিলেন, সংসদ সদস্যগণ আকাশের সহিত তুলনীয় বলিয়াই রাজউকের প্লট চাহেন, যাহাতে তাহারা মাটিতে নামিতে পারেন। মাটির সহিত সম্পর্ক সাধনের ইহা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাদ দিয়া রাজউকে চলিয়া গিয়াছি। এই দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
হুজুর! আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকাণ্ড লইয়া আলোচনা করিতেছিলাম।
হ্যাঁ। গুরুদেব শান্তকণ্ঠে কহিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক্ষণে গণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইয়াছে।
প্রভু! আমার সীমাহীন অজ্ঞতা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিলে বাধিত হইব। শিষ্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসিল, এনবিআর কি পূর্বে গণমুখী ছিল না?
সত্যি বলিতে কি, ওয়ান-ইলেভেনের পর এনবিআর দুদকের একটি এজেন্সি হিসাবে কাজ করিত। অবশ্য উহার সর্বময় ক্ষমতা ছিল তত্কালীন দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের হাতে। সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে সেনা কর্মকর্তাগণ রাজস্ব বোর্ডের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন। গুরুদেব জানাইলেন।
গুরুদেবের কথায় শিষ্যের স্মরণ হইল, তাহার এক নিকট আত্মীয়ার নজিরবিহীন দুর্ভোগের কথা। মহিলার স্বামী একজন সাবেক এমপি ছিলেন এবং দুর্নীতির দায়ে তাহাকে কারারুদ্ধ করা হইয়াছিল। সাবেক এমপির স্ত্রী হওয়ার অপরাধে মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। কিন্তু স্ত্রীর নামে বা অ্যাকাউন্টে স্বামীর কোনো সম্পদ বা অর্থের ট্রানজেকশন না পাওয়ায় রাজস্ব বোর্ডের কোনো কোনো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাগণের হতাশার অন্ত ছিল না। তাহারা বত্সরাধিক কাল ধরিয়া মহিলার পূর্বের পাঁচ বত্সরের আয়করের হিসাবপত্র তন্নতন্ন করিয়া খুঁজিয়া কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি বাহির করিতে না পারিয়া অত্যন্ত মর্মাহত হন। অবশেষে কর গোয়েন্দা বিভাগ হইতে জানানো হয়, আয়কর বাবদ তাহার নিকট সরকারের পঞ্চাশ টাকা পাওনা হইয়াছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পূর্বে উহা পরিশোধ করিতে হইবে। এহেন প্রহসনের উত্তর দিবার কোনো উপায় তত্কালে ছিল না। অধিকতর নিগ্রহ ও মানসিক নির্যাতনের হাত হইতে পরিত্রাণের নিমিত্ত ঐ ৫০ টাকা পরিশোধ করিয়া মহিলাকে পরিত্রাণ লাভ করিতে হইয়াছিল।
শিষ্য দীর্ঘ সময় চুপ করিয়া থাকায় গুরুদেব জিজ্ঞাসিলেন, তুমি কি ভাবিতেছ?
স্যার! ওয়ান-ইলেভেনের পর আয়কর লইয়া মানুষের দুর্ভোগ ও নিগ্রহের যে অবস্থা দেখিয়াছি, উহা মনে ভাবিতেছিলাম। শিষ্য বলিল, আয়করের নথি লইয়া মিডিয়ায় তত্কালে কতই না কল্পকাহিনী ছড়ানো হইয়াছে।
অবশ্য উহা রাজস্ব বোর্ড করে নাই, করিয়াছে দুর্নীতি দমন কমিশন। জরুরি অবস্থা বহাল থাকার সুযোগে দুদক রাজস্ব বোর্ডকে সকল নথিপত্র প্রদানে বাধ্য করিয়াছিল। এখন সেই রাম নাই, সেই রাজত্বও নাই। সম্প্রতি দুদকের ক্ষমতা সর্বাত্মকভাবে হ্রাস পাইয়াছে। দুদকের কার্যক্রম এক্ষণে পরিচালিত হইতেছে ২০০৪ সালে প্রণীত নিজস্ব আইনে। বর্তমান চেয়ারম্যান তাই আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছেন, দুদককে দন্তহীন ব্যাঘ্রে পরিণত করা হইয়াছে। তাহার নখগুলিও কর্তনের উপক্রম হইয়াছে।
মহাত্মন! আপনি যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে গণমুখী প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিলেন, উহার কারণ কি?
কারণ, এখন কোন করদাতার নথিপত্র চাহিবামাত্র দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রদান করিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাধ্য নহে। এনবিআর আজকাল ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৩ ধারা অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলকারীর গোপনীয়তা রক্ষার দোহাই দিয়া দুদকের পাশ কাটাইয়া চলিয়াছে। এই জন্য উহাকে গণমুখী বলিয়াছি।
প্রভু! আরেকটি বিষয় লইয়া আমি মর্মাহত হইয়াছি।
বাছা! মর্মাহত হওয়ার কারণ মর্মের ভিতরে না রাখিয়া উহা প্রকাশ করা সমীচীন।
কয়েক দিন পূর্বে টেলিভিশনে দেখিলাম অর্থমন্ত্রী বলিয়াছেন, তিনি কর ন্যায়পাল অফিসটি তুলিয়া দিবেন।
কর ন্যায়পাল অফিসটি তুলিয়া দেয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। উহা জোট সরকার কর্তৃক স্থাপিত হইয়াছিল, মহাজোটের আমলে উহা থাকিতে পারে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও কর ন্যায়পাল খায়রুজ্জামান চৌধুরী উভয়ে সিলেটি হইলেও নহে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য ন্যায়পাল অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছেন।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানও ন্যায়পাল অফিস প্রতিষ্ঠায় খুবই আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ন্যায়পাল হওয়ার মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য কাহাকেও খুঁজিয়া না পাওয়ায় তত্কালে ন্যায়পাল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় নাই।
এখন অবশ্য যোগ্য লোক পাইতে তেমন কোন অসুবিধা নাই। ন্যায়পাল পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেও শতসহস্র আবেদনপত্র পাওয়া যাইবে।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়া ন্যায়পাল নিয়োগ?
কেন নয়? একুশে পদক প্রদানের জন্য প্রার্থী চাহিয়া যদি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়, তাহা হইলে ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য ঐ পন্থা অনুসরণ করিলে আপত্তি কিসের?
কিন্তু ন্যায়পালের যোগ্যতা কি হইবে?
তাহাকে অবশ্যই সরকারি দলের অনুসারী হইতে হইবে। তিনি দলীয় স্বার্থরক্ষা করিয়া সর্বদা ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করিবেন।
প্রভু! সব কিছুর পরও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আয়কর প্রদানের বিষয়ে রচিত কবিতাটি লইয়া আমার মনে ধন্দ লাগিতেছে। আমি ইহাতে বিভ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি।
বত্স! উহাতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছুই নাই। ঐ কবিতার সর্বশেষ চরণ হইতেছে ‘ওরে, আজ কী গান গেয়েছে পাখি, এসেছে রবির কর!’ ইহাতে স্পষ্ট বোঝা যায় এনবিআর কর্মকর্তাগণ কবিগুরুকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করায় তাহার স্বপ্নভঙ্গ হইয়াছে। তিনি অসীম আনন্দে উদ্বেল হইয়াছেন। কবিতার প্রতিটি ছত্রে সেই অনুভূতি বাঙ্ময় হইয়া উঠিয়াছে।
প্রভু! আরেকটি প্রশ্ন আমার মনের কন্দরে বাসা বাঁধিয়াছে। উহা বলিতে অনুমতি চাহিতেছি।
তুমি নির্দ্বিধায় বলিতে পার।
কবিগুরু নোবেল পুরস্কার বাবদ তত্কালে বিশাল অংকের টাকা আয় করেন। তিনি কি ঐ অর্থের আয়কর পরিশোধ করিয়াছিলেন?
শিষ্যের প্রশ্ন শুনিয়া গুরুদেবের মুখের উপরে অন্ধকার নামিয়া আসিল। তিনি গম্ভীরস্বরে কহিলেন, বত্স! এই ধরনের অনভিপ্রেত প্রশ্ন তুমি তোমার নিজের মনের ভিতরে পুঁতিয়া রাখো। খবরদার! ইহা যেন কোনো কর কর্মকর্তার গোচরীভূত না হয়।
কেন প্রভু?
কারণ রবীন্দ্রনাথ কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ হইয়া ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি রচনা করিয়াছিলেন সত্য, ইহার পরেও সম্ভবত তিনি আয়কর প্রদান করেন নাই। অন্তত নথিপত্রে ওইরূপ কোন প্রমাণ দেখা যাইতেছে না। গুরুদেব পুনরায় কহিলেন, আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ হওয়া ও আয়কর প্রদান করা এক কথা নহে। তবে যে সকল সংসদ সদস্য আয়কর প্রদান করেন নাই, এই কথা তাহাদের কানে যেন না যায়।
গুরুদেবের কথা শুনিয়া শিষ্য হা করিয়া তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল। গুরুদেব আপন মনে আবার আবৃত্তি করিতে থাকিলেন—‘আজি এ প্রভাতে রবির কর’...
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

No comments

Powered by Blogger.