আরব লীগের কঠোর সমালোচনায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ

মানবজমিন ডেস্ক: সিরিয়াতে আরব লীগের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর কারণে এর তীব্র সমালোচনা করেছেন জনবিক্ষোভের শিকার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সমপ্রচারিত এক বিরল ভাষণে আসাদ বলেছেন, উপসাগরীয় এলাকাতে রাজতন্ত্রের শাসন প্রচলিত দেশ সহ অন্যান্য আরব সরকারের কি অধিকার আছে সিরিয়াকে গণতন্ত্র বা সংস্কারের ব্যাপারে উপদেশ দেয়ার। আসাদ আরব দেশগুলোর প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ১৯১৭ সালে সিরিয়াতে প্রথম পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছিল। তখন এরা কোথায় ছিলেন? এদের অবস্থা অনেকটা ধূমপায়ী ডাক্তারের মতো যিনি নিজে ধূমপান করেন অথচ সিগারেট হাতে নিয়েই রোগীকে ধূমপান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। তিনি আরব লীগের সমালোচনা করলেও এর মধ্যস্থতায় দেশের সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগের জন্য ‘দরজা বন্ধ’ করবেন না। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ তারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে ততক্ষণ তাদের জন্য সিরিয়ার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, গত মার্চ মাস থেকে দেশে শুরু হওয়া অস্থিতিশীলতার কারণে সিরিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য আসাদ বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের দোষারোপ করেন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার ব্যাপারে গত মাসে আরব লীগের পরিকল্পনায় সম্মত হবার পর গতকালই আসাদ প্রথম বক্তব্য দিলেন। দামেস্ক ইউনিভার্সিটিতে দেয়া ওই ভাষণে তিনি দাবি করেছেন, সত্য অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তার পরিকল্পনা মতোই আরব লীগ সিরিয়াতে পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে। আসাদ বলেছেন, কয়েক মাস ধরে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলেও যতদিন তার পক্ষে জনগণের সমর্থন থাকবে ততদিন তিনি পদত্যাগ করবেন না। তিনি বলেন, যখন আমি ক্ষমতা ছাড়বো তখন সেটা জনতার ইচ্ছেতেই ছাড়বো। আসাদ বলেন, বিদেশী শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র করছে। সিরিয়াতে বিদেশী মিডিয়ার কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে তিনি বলেছেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শুরুতে সব মিডিয়াকেই শক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের ভেতর থেকেই উস্কানিমূলক এবং বানানো সংবাদ পরিবেশনের কারণে আমরা এতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেছেন, সিরিয়ানরা যদি অবিচল থাকেন তাহলে বিজয় আমাদের খুবই কাছে। বহিঃশক্তি বিপ্লবের মাধ্যমে যে অবস্থান তৈরি করতে চেয়েছিল তাতে তারা সক্ষম হয়নি। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আসাদ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৫০০০-এর বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকেও বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আসাদের এ বক্তব্য দেয়ার আগে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েপ এরদোগান সিরিয়াতে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এরদোগান সোমবার বলেছিলেন সিরিয়া পরিস্থিতি ধর্মীয় এবং জাতিগত সহিংসতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, তুরস্কের এক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি তুরস্কের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এরদোগান আসাদকে পদত্যাগের পাশাপাশি সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের আহ্বান জানালেও সিরিয়ার পরিস্থিতি অবনতি রোধ করতে আঙ্কারা কি ব্যবস্থা নেবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

No comments

Powered by Blogger.