রায়পুরা নরসিংদী : আওয়ামী লীগ-মন্ত্রী ও তাঁর ভাইয়ের পকেটে by সুমন বর্মণ

রসিংদী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর হাতে বন্দি রায়পুরা আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের আমলে রায়পুরায় উন্নয়ন হলেও বিভিন্ন কারণে ক্রমেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং শহর আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। অন্যদিকে, প্রবীণ এই নেতার কোনো রাজনৈতিক উত্তরসূরি এখানে তৈরি না হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়পুরা থেকে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। এরই পুরস্কার হিসেবে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। কিন্তু জনপ্রিয় এই নেতার প্রায় তিন বছর কেটেছে দুই বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতাবেষ্টিত হয়ে। তারা ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মন্ত্রীর কাছ থেকে সব সময় দূরে সরিয়ে রেখেছে। সব কাজ তাদের হাত ছাড়া কেউ করতে পারে না, তাদের বিরুদ্ধে রায়পুরায় যাত্রা, জুয়া ও বদলিবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ দলের সব অঙ্গসংগঠনে মন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের কারণে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে সহযোগী সংগঠনগুলোর। ফলে সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।
এদিকে, বয়সের ভারে ন্যুব্জ মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে মন্ত্রীর উত্তরসূরি নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। এরই মধ্যে মন্ত্রীর উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় আসছেন মন্ত্রীর ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। তিনি বর্তমানে উপজেলা উন্নয়ন কমিটি আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এস এম কাইয়ুম। তিনি মন্ত্রীর চরম বিরোধিতার মধ্যে গত উপজেলা নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে না পারলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে রুখতে পরবর্তীকালে কাইয়ুমকে গ্রেপ্তার এবং একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে। পরে তীব্র শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে কাইয়ুম জেল থেকে ছাড়া পান।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন দলীয় রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী ভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি আইন পেশা এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। শুধু দলীয় সভার জন্যই কয়েক মাস পরপর খোলা হয় রায়পুরা বাজারে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। স্থানীয় রাজনীতি মন্ত্রীনির্ভর; এবং মন্ত্রীর কাছ থেকে মূল্যায়ন না পেয়ে একসময়কার অনেক সক্রিয় নেতা-কর্মী এখন উপজেলার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ছয় মাস আগে উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল হলেও তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে মন্ত্রী কমিটি ঘোষণার চেষ্টা করলে হট্টগোল বাধে। এর ফলে আটকে যায় উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন।
দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পাড়াতলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ জানান, মন্ত্রী ব্যস্ত সারাদেশ নিয়ে, উপজেলা সভাপতি নিশ্চুপ, সাধারণ সম্পাদক ব্যস্ত ওকালতি ও চেয়ারম্যানী নিয়ে, আবার অনেক নেতা ব্যস্ত টেন্ডার নিয়ে। দল নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই। তাই দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী ভূঞা জানান, নেতাদের সীমাবদ্ধতার কারণে দলের সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুই নেতার ব্যাপারে নেতা-কর্মীদের অসন্তোষ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমিও শুনেছি।'
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এস এম কাইয়ুম জানান, রায়পুরায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো বলতে কিছু নেই। রাজনীতি চলছে মন্ত্রী এবং তাঁর ভাইয়ের নির্দেশে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই তাঁকে মামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রাান করা হচ্ছে। পাশাপাশি মন্ত্রী যে দুজন ব্যক্তির পরামর্শে নেতা-কর্মীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, রায়পুরায় যাত্রা, জুয়া ও বদলিবাণিজ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.