জলদাস-জেলেজীবনের ইতিবৃত্ত by মামুন মিজানুর রহমান

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় গত ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা পদাতিকের পরিবেশনায় 'জলদাস' নাটকের ৫০তম মঞ্চায়ন। বিস্তারিত লিখেছেন মামুন মিজানুর রহমান নাটকের মঞ্চে দর্শকের খরা নতুন নয়। আমাদের নাট্যমঞ্চ বেশির ভাগ সময়ই দর্শকের অভাবে খাঁখাঁ করে। কিন্তু গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।


সেদিন ছিল ঢাকা পদাতিকের পরিবেশনায় 'জলদাস' নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে শিল্পকলায় বিপুলসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সন্ধ্যা ৭টায় নাটক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৬টা থেকেই দর্শকরা মিলনায়তনে প্রবেশের জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান। আধঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও তাঁরা বিরক্ত হওয়ার বদলে খুশিমনেই ছিলেন নাটকের অপেক্ষায়। দর্শকদের দুটি সারিকেই ভিড়ের কারণে দুই ভাগে ভাগ করতে হয়েছে।
নাটক শুরুর আগেই মিলনায়তনের প্রতিটি আসন দর্শকদের দখলে চলে যায়।?এ বিষয়ও এই নাটকের একটি বড় সাফল্য। 'জলদাস' ঢাকা পদাতিকের ৩২তম প্রযোজনা। হারুন অর রশীদ রচিত এ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন অভিনেতা নাদের চৌধুরী। এটা প্রথম মঞ্চে আসে ২০০৬ সালে। নাটকটি ইতিমধ্যে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই এর ৫০তম মঞ্চায়ন হয়ে গেল। ৫০তম মঞ্চায়নের উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। এ নাটকে উঠে এসেছে জলজীবনের বস্তুনিষ্ঠ চিত্র। 'পদ্মা নদীর মাঝি' কিংবা 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসে যেমন ফুটে উঠেছে নদীভিত্তিক জীবনযাপনের প্রকৃত চালচিত্র, তেমনই এ নাটকেও চিত্রিত হয়েছে জেলেদের জলজীবন। জেলেজীবনের নানা সংকট ও জীবনযাপন এতে প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরা হয়েছে। 'জলদাস' জেলেজীবনের একটি প্রামাণ্য নাটক, যদিও এতে রয়েছে একটি হৃদয়গ্রাহী গল্পও। গল্পটি ব্যক্তিবিশেষ বা পরিবারবিশেষের নয়, এটা ধারণ করেছে বাংলাদেশের জেলে সম্প্রদায়ের প্রকৃত জীবনচিত্র। নৌকার মালিক, ঘাটের ইজারাদার, মহাজন ও মধ্যস্বত্বভোগীরাই ভোগ করে থাকে জেলেদের রক্ত পানি করা পরিশ্রমের উপার্জন। জেলেরা মাছ শিকার করে নিজেরা ভোগ করতে পারে না। নামমাত্র মূল্যে মাছ বিক্রি করে তারা দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়। এমনই একটি গল্পের মধ্য দিয়ে এই নাটক জেলে সম্প্রদায়ের বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের চিত্র তুলে ধরেছে।
এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম নান্টু, মাসুদ আহম্মেদ, বরুণ কুমার সাহা তনু, সালাউদ্দিন রাহাত, রিফাত আরা মুর্তজা মিতি, মৌসুমী ইসলাম, মাসুম আজিজ, মাহবুবুর রহমান টনি, রফিক আল রাজী, কাজী আমিনুর, শ্যামল হাসান, মোতালেব হোসেন, সাবরিনা আক্তার লীজা, সাবিহা জামান, শেখ শানে মাওলা, মিল্টন রেজা, খোরশেদ আহাম্মদ প্রমুখ। মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন কামাল উদ্দিন কবীর, আলোক পরিকল্পনায় আমিনুর রহমান আজম এবং পোশাক পরিকল্পনায় খোরশেদ আহাম্মদ।

No comments

Powered by Blogger.