রায়পুরা নরসিংদী : বিএনপি-ভেতরে-বাইরে কোন্দল

জামাল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বছরের অধিকাংশ সময় ব্যবসার কারণে প্রবাসে থাকেন। নরসিংদীর রায়পুরার রাজনীতিতে তাঁর আবির্ভাব টাকাওয়ালা রাজনীতিবিদ হিসেবে। রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন যোগ্যতা নয়, টাকার জোরেই তিনি একের পর এক বাগিয়ে নেন সংসদ নির্বাচনে দলের টিকিট থেকে শুরু করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী পর্ষদের সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদটিও।


কিন্তু টাকার হাওয়ায় ভাসতে থাকা রায়পুরা বিএনপি বর্তমানে কোন্দলে জর্জরিত। দুই বছর আগে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
সরেজমিন রায়পুরা উপজেলা ঘুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল আলী মৃধা ধানের শীষের টিকিটে নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর কাছে পরাজিত হন তিনি। আবদুল আলী মৃধার টানা দুবারের ব্যর্থতায় বিএনপির ভেতর সৃষ্টি হয় কোন্দল। এ সুযোগে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন দলের নতুন মুখ প্রবাসী ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ চৌধুরী। জামাল চৌধুরীকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিভিন্ন পত্রিকায় আবদুল আলী মৃধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেওয়ার কারণে তাঁর দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু জামাল আহমেদ চৌধুরী বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগের রাজিউদ্দিন আহাম্মেদ রাজুর কাছে পরাজিত হন।
নির্বাচনের পর জামাল আহমেদ চৌধুরী তাঁতী দলের নেতা মনিরুজ্জামান মনির হত্যামামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফাইজুর রহমান ও একই হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এম এন জামানকে নিয়ে দলীয় কাজ শুরু করলে দলের অধিকাংশ প্রবীণ নেতা-কর্মীর বাধার মুখে পড়েন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আলী মৃধা, যুবদলের সহ-সভাপতি এ কে এম নেছার উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ফজলুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি ফিরোজ আল মামুন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আলী রেজা রহমান খোকন। এতে করে উপজেলা বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে জামাল চৌধুরী নিজের পছন্দের লোককে ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে বসিয়েছেন। কিন্তু ২০০৯ সালের নভেম্বরে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে জামাল আহমেদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি বিজয়ী হলেও তৃণমূলের ভোটে সাধারণ সম্পাদক পদটি ছিনিয়ে নেন অপর অংশের আবদুর রহমান খোকন। ফলে জেলার সব উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হলেও শুধু রায়পুরা উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন আটকে যায়। এমনকি দলীয় কোনো অনুষ্ঠানে জামাল আহমেদ চৌধুরী ও আবদুল রহমান খোকনকে একসঙ্গে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে জামাল চৌধুরীর অনুসারীরা দাবি করছেন, ওই কমিটি বাতিল করে জামাল চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ভূইয়া বলেন, 'জামাল চৌধুরী রাজনীতিতে টাকার নোংরা খেলা খেলছেন। এতে রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি রাজনীতিবিদরা হারাচ্ছেন তাঁদের ন্যায্য মূল্যায়ন। এ কারণে একের পর এক নেতা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে জেলার নেতাদের নজর নেই। জামাল চৌধুরীর টাকার ওষুধ পান করে সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে গেছি।'
এমপি আবদুল আলী মৃধা বলেন, '৩১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। চক্রান্তকারী মহল দলের মনোনয়নবঞ্চিত করেও ক্ষান্ত হয়নি, সত্য কথা বলায় অবশেষে আমার দলীয় সব পদ স্থগিত করে। ইতিমধ্যে আমি দলের চেয়ারপার্সনের কাছে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছি। আমি রায়পুরায় বিএনপির একজন নেতা হিসেবে দলের কাজে অংশগ্রহণ করার অনুমতি চাচ্ছি।'
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান খোকন বলেন, জামাল চৌধুরীর একনায়কতান্ত্রিক আচরণের জন্য রায়পুরায় দলীয় কোনো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। কারণ মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় জেলার নেতাদের যথাযথ ভূমিকাই পারে ঝিমিয়ে পড়া রায়পুরা বিএনপিতে প্রাণের সঞ্চার করতে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাজনীতিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির সহভাপতি ফাইজুর রহমান বলেন, জামাল চৌধুরী ব্যবসায়িক কাজে মালয়েশিয়া রয়েছেন। বিদেশ থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিভাবে চালান জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তিনি আমাদের মাধ্যমে দলের কার্যক্রম চালান। বড় ধরনের কর্মসূচি হলে তিনি নিজে অংশগ্রহণ করেন।' রায়পুরায় কোনো কোন্দল নেই দাবি করে তিনি বলেন, দলের কাজ সঠিকভাবেই চলছে।

No comments

Powered by Blogger.