জবিতে ধর্মঘটের ডাক মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ

জবি রিপোর্টার: শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দেন। দাবি আদায়ে কোন প্রতিশ্রুতি না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি দিয়েছেন। উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে    পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পৌনে ১টার দিকে তারা ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ভিসিকে বৈঠকে বসার দাবি জানাতে থাকে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুপুর পৌনে ২টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ভিসি’র সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বললেন, উচ্চশিক্ষা পেতে হলে কিনতে হবে। বৈঠকে ভিসি ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ভিসি বলেন, উচ্চশিক্ষা টাকা দিয়ে কিনে নেয়ার জিনিস, ব্যয়বহুলের প্রশ্ন অবান্তর। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের কোন যুক্তি নেই। বৈঠক থেকে বেরিয়ে ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক শরীফুল চৌধুরী বলেন, ভিসি আমাদের কোন আশ্বাসই দেননি। উল্টো আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। এদিকে ওই বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আন্দোলকারীরা বুধবার থেকে পরীক্ষা এবং ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাসনা হেনা বেগমকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছিল। তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে পাঁচ বছর পর নিজস্ব অর্থায়নে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চলানোর কথা বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি বাড়িয়ে দেয়া হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বরাদ্দ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। উন্নয়ন ফি ও বিশ্ববিদ্যালয় আইনের একটি ধারা বাতিলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকালে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও প্রায় এক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিলের পর বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রেখেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, উন্নয়ন ফি ও ২৭/৪ ধারা বাতিলের ঘোষণা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭/৪ ধারা বাতিল কার্যকর করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে কিছুদিন আগে একটি চিঠি এসেছে। সেই চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কোন কোন ধারা পরিবর্তন বা বাতিল করতে হবে, তা জানাতে চাওয়া হয়েছিল। প্রশাসন সেই অনুযায়ী কাজ করছে। তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭/৪ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু এ ঘোষণা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.