মিরপুরে অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ

রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ায় সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত মার্কেটটি (স্থাপনা) গতকাল বুধবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। বুলডোজার চালিয়ে, নির্মাণ শ্রমিক নিযুক্ত করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো মার্কেটটি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল আমীনের নির্দেশে উচ্ছেদের সময় পর্যাপ্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে একই জমিতে দুবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর গতকাল তৃতীয় দফা অভিযান চালিয়ে সফল হলো সরকার। নতুনভাবে নির্মিত মার্কেটটি উচ্ছেদের সঙ্গে পাশের আরও একটি মার্কেটের অংশ ও বাঁশ বিক্রির পট্টি উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান সফল হওয়ায় নতুনভাবে নির্মিত মার্কেটের জমি, পাশের স্থানে আগের নির্মিত আরেকটি মার্কেটের অংশ, বাঁশপট্টি ও নতুন মার্কেটটির পশ্চিম পাশের খালি জায়গা মিলে প্রায় ১৪ একর জমি সরকারের দখলে চলে এসেছে। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ওই জমি দখল ও ভেঙে দেওয়া ইউনিটি সুপার মার্কেট নামের মার্কেটটি পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের দেখা যায়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল ভোরেই মার্কেটের উত্তর পাশে অবস্থান নেয় ৬ প্লাটুন পুলিশ। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা ঘোরাফেরা করছিলেন মার্কেটটির চারপাশে। ম্যাজিস্ট্রেট আল আমীনের নির্দেশে মার্কেট ভাঙার কাজ শুরু হয় ১১টা ২৫ মিনিটে। এর আগে মার্কেটের সামনে ও আশপাশে উপস্থিত লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পরও ব্যানার নিয়ে মার্কেট রক্ষার দাবিতে দাঁড়িয়ে থাকেন মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী ও কর্মচারী। পরে ১০ মিনিটের মধ্যে সরে যাওয়ার কড়া নির্দেশ দেওয়া হলে তারা সরে গিয়ে যার যার দোকানপাট থেকে মালপত্র সরাতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ভাঙার কাজ।
বুলডোজার দিয়ে প্রথমে ভাঙা হয় ইউনিটি সুপার মার্কেট লেখা গেটটি। ভেঙে দেওয়া হয় 'মা সুফিয়া ফার্মেসি নামের ওষুধের দোকান। এরপর দুটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। একই সঙ্গে মাথায় লাল ফিতা বাঁধা শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয় ভাঙার জন্য। এক ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলা হয় মার্কেটটির প্রায় অর্ধেক অংশ। উচ্ছেদ চলাকালে মার্কেটের সামনের সড়কের উত্তরে মিরপুর ১ নম্বর গোলচক্কর থেকে মার্কেটটির বেশ দক্ষিণে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ শত শত উৎসুক জনতা মার্কেটটির সামনের রাস্তায় ও আশপাশে ভিড় জমায়। পুরো জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ কাজ শেষ করা হয় বিকেল ৪টায়।
উচ্ছেদ চলাকালে মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা প্রতারণার শিকার। দখলদাররা নিজের জমিতে মার্কেট তৈরি করেছেন বলে আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া বাবদ অগ্রিম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। অনেকে সারাজীবনের সঞ্চিত পুঁজি বিনিয়োগ করে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। এখন তাদের টাকা কে ফেরত দেবেন_ এ কথা বলে অনেকে কেঁদে ফেলেন। এ সময় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাঁড়িয়েও এসব কথা বলেন। একজন দোকানি বলেন, অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিয়ে তিনি একটি দোকান নিয়েছিলেন। এ টাকা ছিল তার জীবনে সঞ্চিত সব টাকা। এখন তার হাত শূন্য। তিনি বলেন, মার্কেট কমিটির সব লোক পালিয়েছে। কার কাছে টাকা চাইব। তাদের কোথায় পাব। শফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে ১০টি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৫টি দোকান চালু করলেও বাকি ৫টি চালু করতে পারেননি। এরই মধ্যে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি তার মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকার বিপরীতে কোনো কাগজপত্র দেয়নি।
উচ্ছেদ চলাকালে ম্যাজিস্ট্রেট আল আমীন সমকালকে বলেন, সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি জমি হাজার বছর পরও তামাদি হয় না। যারা সরকারি জমি দখল করবে তাদের মনে রাখতে হবে, কোনো না কোনো সময় সরকার সে জমি উদ্ধার করবে।
মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম ইকবাল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১৯৬০-'৬১ সালে তৎকালীন সরকার ওই জমি অধিগ্রহণ করেছিল। এ লক্ষ্যে ১৬ তলাবিশিষ্ট ৬টি ভবন নির্মাণের জন্য মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। গত অক্টোবরে হঠাৎ মিজানুর রহমান খোকন গং অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে নেয়। এর পরই গণপূর্ত বিভাগ থেকে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। অবশেষে জমি উদ্ধার করা হলো। দারুস সালাম থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে সর্বশক্তি নিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারের জমি সরকার উদ্ধার করতে পেরেছে এটাই অ্যাচিভমেন্ট বলে মন্তব্য করেন।
উচ্ছেদ চলাকালে মিরপুর গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী শরীয় উদ্দিন আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, মিরপুর গণগূর্ত বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, স্থানীয় মিজানুর রহমান গং জাল কাগজপত্র তৈরি করে মিরপুর গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর আওতাভুক্ত পাইকপাড়া মৌজার সিএস-১০, ১১, ১২ ও ১৩ আংশিক দাগের এবং পূর্ব কান্দর মৌজার সিএস-১১, ১২, ১৩ আংশিক দাগের ওই জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.