প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর যেন অর্থবহ হয় by শাহ আহমদ রেজা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৮ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাবেন। এই সফরকে ঘিরে প্রস্তুতি বেশি নেয়া হচ্ছে ভারতের দিক থেকে। সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব নিরূপমা রাও ইতিমধ্যে ঢাকায় ঘুরে গেছেন। অনেকাংশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌজন্যও দেখিয়েছেন তিনি— যেটা গত এপ্রিলে তার পূর্বসুরী শিবশংকর মেনন দেখাননি। নিরূপমা রাও জানিয়ে গেছেন, নেপালে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারত বাংলাদেশকে রেল ট্রানজিট দেবে।
অন্য একটি বিশেষ কারণেও ভারতের প্রস্তুতির কথা উঠেছে। ঠিক এ সময়েই হঠাত্ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কারের’ জন্য মনোনীত করার ঘোষণা এসেছে নয়াদিল্লি থেকে। বিষয়টি যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ। সন্দেহ নেই, শেখ হাসিনার পুরস্কার পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট সম্মানের ব্যাপার, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরকে শুধু পুরস্কার গ্রহণ করার উপলক্ষে পরিণত করা হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। এমন আশংকার কারণ, মনোনয়নের কথা জানানোর সময় বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতি ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়ার আহবানের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। ফলে নতুন পর্যায়ে জোরেশোরেই প্রশ্ন উঠেছে, শুধু বাংলাদেশকেই কেন ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দিতে হবে? নিজের ক্ষতি করে হলেও ভারতের কোন্ দাবি ও প্রস্তাব বাংলাদেশ অপূর্ণ রেখেছে? উত্তর হলো, রাখেনি এবং রাখতেও পারেনি।
অন্যদিকে ভারত কিন্তু কোনো একটি ব্যাপারেই ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়নি। ভারত বরং সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্তই করে চলেছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথমে বিএসএফের নিয়মিত হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করা যায়। এক রিপোর্টে জানা গেছে, চলতি বছর ২০০৯ সালের সাড়ে ১০ মাসে বিএসএফ ৯১ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। কিন্তু বিএসএফের হত্যাকান্ড বেড়ে চললেও এ সময়ে কোনো ভারতীয় নাগরিক বিডিআরের গুলিতে মারা যায়নি। দু’ দেশের বাণিজ্যের কথাও উল্লেখ করা দরকার। তিন-তিনটি যুগ অতিক্রান্ত হলেও প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে বিপুল ঘাটতির মধ্যে রেখেছে ভারত। কোনো কোনো অর্থ বছরে তার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ভারতে রফতানির পরিমাণ কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও এই ঘাটতি কমবার সামান্য সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ভারতীয়রা বাংলাদেশের ভেতরে নিজেদের পণ্য ঠেলে দেয়ার ব্যাপারেই বেশি ব্যস্ত থাকে— অনেক বেশি পণ্য পাঠায় তারা চোরাচালানের অবৈধ পথে। আমদানির ক্ষেত্রেও ভারতীয়রা একই নীতি-মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে।
ভারত কীভাবে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে পানির কথা বলতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয়দের মনোভাব রীতিমতো শত্রুতাপূর্ণ। উজানের দেশ হওয়ার সুবিধাকে ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের উজানে একের পর এক বিভিন্ন নদীর মুখে বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফারাক্কা বাঁধের নাম যত কম স্মরণ করা যায় ততই ভালো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো মওসুমেই বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। বন্যার সময় একই ভারত আবার সব বাঁধের গেট খুলে দেয়। ফারাক্কার পাশাপাশি ছোট-বড় অসংখ্য বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি প্রত্যাহার ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় অভিন্ন ৫৪টির মধ্যে ৪০টি নদ-নদী শুষ্ক মওসুম শুরু হওয়ার আগেই আজকাল পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অনেক নদ-নদী খালে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে এসেছে টিপাইমুখ বাঁধ। এই বাঁধ নির্মিত হলে বৃহত্তর সিলেটের পাশাপাশি দেশের সকল অঞ্চলে মহাবিপর্যয় ঘটবে। কিন্তু ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে সরে আসেনি।
বাংলাদেশের প্রতি সত্ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপনে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে না ভারত। দেশটি আমাদের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা এলাকাসহ সমুদ্র সীমার ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার অমীমাংসিত এলাকার ভেতরে ঢুকে তেল ও গ্যাসের জন্য অনুসন্ধান কাজে হাত দিয়েছে। ফলে লুন্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া এবং প্রয়োজনে তাদের ব্যবহার করাসহ আরো অনেকভাবেই ভারত বাংলাদেশের ক্ষতি করে চলেছে। ট্রেন সার্ভিসও এসেছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। যতোই ‘বন্ধুত্বের’ কথা বলা হোক না কেন, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সামান্যও উপকৃত বা লাভবান হতে পারবে। পারবে না মূলত ভারতের মনোভাব ও অবন্ধুসুলভ কর্মকান্ডের কারণে। কথা আরো আছে। বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার এবং নিজের বাজার বানানোর পাশাপাশি ভারতের আরেক প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু অন্য রকম। সেটা আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব কমিয়ে আনা। রাজ্যগুলোকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়। বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না পারলে পশ্চিম বঙ্গ থেকে এই অঞ্চলে যেতে দূরত্ব হয় দেড়-দুই হাজার কিলোমিটার বেশি। এত বেশি দূরত্বের কারণে একদিকে রাজ্য সাতটি অবহেলিত হয়ে আসছে, অন্যদিকে সেখানে চলছে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ। ভারতও সে কারণে করিডোর ও ট্রানজিটের নামে যে কোনোভাবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ চেয়ে এসেছে। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলাদেশের নিজের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত রয়েছে বলে অতীতের কোনো সরকারই করিডোর দেয়নি। সামপ্রতিক সময়ে সে কাজটিরই সূচনা করে গেছে ফখরুদ্দিনদের অনির্বাচিত সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারও এশিয়ান হাইওয়ের ধোঁয়া তুলে ভারতের ইচ্ছা পূরণের জন্য পা বাড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে প্রকৃতপক্ষে ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়ার নামে দেশকে অমন এক পরিণতির দিকেই ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে এখন।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, করিডোরের বিনিময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ও পানি আগ্রাসন বন্ধ করার মতো বিভিন্ন প্রশ্নে দরকষাকষি করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার তেমন চেষ্টা করেনি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পর ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকা সফরে এসেছিলেন। কিন্তু তার কাছে পানি সমস্যার কথাটাই তোলা হয়নি। উল্টো পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন তখন বলে বসেছিলেন, ভারতের বদৌলতে কিছু পরিমাণে হলেও পানি যে পাওয়া যাচ্ছে সেটাই নাকি আমাদের ‘সৌভাগ্য’!
জঙ্গিদের নিয়ে শোরগোল তোলার বিষয়টিও কম তাত্পর্যপূর্ণ নয়। অন্তরালে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা থাকায় জঙ্গিদের বিষয়টিকে সামপ্রতিককালে সুচিন্তিতভাবেই প্রাধান্যে আনা হয়েছে। বাংলাদেশে আজকাল শুধু পাকিস্তানের ‘লস্কর’রা নয়, ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’রাও ধরা পড়ছে। অন্যদিকে সত্য হলো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলতে যা বোঝায় ভারতের তুলনায় তার কিছুই নেই বাংলাদেশে। বস্তুত, চার দলীয় জোট সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেয়ায় ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মতো আর কোনো ঘটনা দেশে ঘটেনি। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ জঙ্গি নেতাদের জোট সরকারই গ্রেফতার করেছিল। জোট সরকারের এই কঠোর ভূমিকার কারণে আর কখনো সুসংগঠিত সন্ত্রাসী তত্পরতার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘জঙ্গি জঙ্গি’ বলে পাড়া মাতানোর ব্যাপারে উত্সাহ দেখিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিন ধরে দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনের নামে হৈ-চৈ করার পাশাপাশি সরকার জঙ্গি দমনের জন্য ভারতের সাহায্য নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল। এর পরপরই পিলখানা হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। এই হত্যাকান্ডকে অজুহাত বানিয়ে সরকার বিডিআরের বিলুপ্তি ঘটানোর এবং সমগ্র প্রক্রিয়ায় ভারতের সাহায্য নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর ফলে বিশেষ কিছু কারণে দেশপ্রেমিকদের মনে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান কারণ হলো, ভারত নিজেই ‘হাজার ধরনের’ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কর্মকান্ডে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। বস্তুত ভারতের সন্ত্রাস পরিস্থিতি এক কথায় ভীতিকর। দেশটির ৬০৮টি জেলার মধ্যে ২৩১টি জেলায় অর্থাত্ দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকাতেই জঙ্গিরা হত্যা-সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ভারতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সংখ্যা ২৭০টি। হত্যা-সন্ত্রাসের কারণে ভারতের প্রধান আটটি রাজ্য মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিম বঙ্গকে ‘লাল অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলায় ভারতে মৃত্যুর সংখ্যাও চমকে দেয়ার মতো। ১৯৯৪ থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেনা ও পুলিশসহ ৫৪ হাজার ৯৬৯ জন সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেছে। এত বেশি হত্যাকান্ডের কথা বিশ্বের কোনো দেশে কল্পনাও করা যায় না। অর্থাত্ সন্ত্রাসে ভারত নিজেই যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে।
অমন একটি দেশের কাছে জঙ্গি দমনের জন্য সরকার সাহায্য চেয়েছে বলেই দেশপ্রেমিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করেন, উদ্দেশ্য আসলে বাংলাদেশের কথিত জঙ্গিদের দমন করা নয়। এর পেছনে রয়েছে ভারতের প্ররোচনা। জঙ্গি দমনের আড়াল নিয়ে ভারত একদিকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাধীনতার জন্য চলমান সশস্ত্র সংগ্রামকে দমন করতে চায়, অন্যদিকে চায় নিজের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে। এখান থেকেই বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি প্রাধান্যে এসেছে। বাংলাদেশে কখনো ট্রেনে আগুন দেয়ার কিংবা একই সঙ্গে শয়ে শয়ে মানুষ হত্যার মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটেনি। অতীতে বিচ্ছিন্ন যেসব ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর পেছনে ছিল সুচিন্তিত পরিকল্পনা— ছিল বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে কুখ্যাতি দিয়ে ফায়দা হাসিল করার উদ্দেশ্য। কিন্তু বাংলাদেশকে কলংকিত করা সম্ভব হয়নি। এজন্যই শুরু হয়েছে কল্পিত সন্ত্রাস ও জঙ্গি গোষ্ঠি সম্পর্কিত কেচ্ছা-কাহিনী। এমন কিছু একটা করার চেষ্টা যে চালানো হবে সেকথা বোঝা গিয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সরকার অকারণে দক্ষিণ এশীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের জন্য উতলা হয়ে ওঠেনি। ভারতীয়দের অনেকেও এ ব্যাপারে জানান দিয়েছেন। যেমন ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ বারবার নয়াদিল্লির ‘রাডার’ থেকে সরে যায়। কিন্তু তা আর হতে দেয়া যাবে না। অর্থাত্ দেশটি যাতে নয়াদিল্লির ‘রাডার’ থেকে সরে যেতে না পারে।
উদ্বেগের কারণ হলো, জঙ্গি দমনে সাহায্য নেয়ার নামে সে পথেই পা বাড়াতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে জানার পরও অনেকে বোঝাতে চান, ভারতীয়দের নীতি, কৌশল ও মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। এজন্যই ভারতের প্রতি ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কারো কারো মধ্যে আগ্রহ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। ভারতও সুযোগ নিতে ভুল করছে না। যেমন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার জন্য দুই ‘বাঙালী’ মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অতি আগ্রহীরা কিন্তু বুঝতেই পারছেন না যে, বিরাট দেশ ভারত শুধু বাঙালীদের দেশ নয়। পশ্চিম বঙ্গ ভারতের একটি সাধারণ রাজ্য মাত্র। সেখানে বাঙালীরা বাস্তবে শোষিত-অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সম্ভাবনার এ প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই তথাকথিত বাঙালীপনার উর্ধে উঠতে হবে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ের ব্যাপারে সততার সঙ্গে চেষ্টা চালাতে হবে। পানির হিস্যা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সমতা, সমুদ্র সীমা, সীমান্ত সমস্যা, বিএসএফের হত্যাকান্ড এবং নেপাল ও ভুটানে যাতায়াতের জন্য ট্রানজিট আদায়সহ প্রতিটি বিষয়ে সমাধান অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র যেমন নয়, ভারতও তেমনি নয় একমাত্র বৃহত্ রাষ্ট্র।
বিশ্বের কোনো অঞ্চলেই এমন কোনো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনো বৃহত্ রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়নি— যেখানে নির্বাচিত ও দেশপ্রেমিক সরকার রয়েছে। দেশের স্বার্থে অবদান রাখতে পারলেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে স্বাগত জানাবে জনগণ। ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ নিয়েও জনগণ তখন গর্ববোধ করবে। প্রধানমন্ত্রীকে তাই লক্ষ্য রাখতে হবে, পুরস্কার গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা যাতে তার সফরের মূল উদ্দেশ্যকে আড়াল না করতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক
ই-মেইল : shahahmadreza@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.