রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ-ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেবেন রাষ্ট্রপতি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে তিনি একটি প্রস্তাবও পাঠাতে চান। রাষ্ট্রপতির এই আগ্রহের প্রতি সম্মান জানাবে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব পাওয়ার পর সরকার আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।


প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পর গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধিদলকে বলেন, তিনি ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেবেন। আওয়ামী লীগের নেতারা রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগকে তৎক্ষণাৎ স্বাগত জানান।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবে কী থাকবে জানি না। তবে ইসি গঠনে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির সুপারিশ করা হলে সংসদ তা বিবেচনা করবে।’
গতকাল বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সংলাপে অংশ নেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন: আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুল জলিল, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও হাছান মাহমুদ। তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ থাকায় সংলাপে অংশ নিতে পারেননি।
সংলাপের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি জানান, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে তাঁর এখতিয়ার থাকলেও তিনি সবার মতামত নিয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন।
এ পর্যায়ে সাজেদা চৌধুরী সংলাপ আহ্বানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আপনি দেশের সব নাগরিকের ঊর্ধ্বে ও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অভিভাবক। আমরা আশা করি, আপনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আপনি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান ও আইনসম্মত যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
সৈয়দ আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সব রাষ্ট্রপতি এককভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করেছেন। এমনকি বর্তমান কমিশনও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ গঠন করেছেন কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই। ব্যতিক্রম কেবল বর্তমান রাষ্ট্রপতি। তিনি সংবিধান অনুসারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এটা একটা মহৎ উদ্যোগ।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘বিএনপির সময় মাগুরা উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠেছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার তা মানতে বাধ্য হয় এবং সংবিধান সংশোধন করে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপনির্বাচন ও তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ কোনো কারচুপির অভিযোগ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আসন হবিগঞ্জ উপনির্বাচনেও সরকারি দল হেরেছে। বর্তমান সরকারের সময় কোনো নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি, এমন কথা কেউ বলতে পারেনি। দলীয় সরকার থাকলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না, সে পরিস্থিতি আর দেশে নেই। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব, তা প্রমাণিত হয়েছে।’
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি সংলাপে নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচির বাইরে বক্তব্য দিয়েছে। কারণ, তাদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল না। কেবল জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে তারা সংলাপে অংশ নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানসহ পৃথিবীর কোনো দেশে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি না থাকলেও আমাদের দেশে তা আছে। শুধু আছেই না, তারা মনে করে, স্বাধীনতা একটা পাপ। এ ধরনের শক্তি থাকলে জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে না। যাদের দেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাস নেই, তাদের নিয়ে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মতো বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ না হলে অন্যান্য বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া কীভাবে সম্ভব?’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাষ্ট্রপতি কোনো নাম চাননি, তাঁরাও কোনো নাম দেননি।
সংলাপের শেষ পর্যায়ে প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.