গ্রেপ্তারে উল্লাস, ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

ড়ির কাঁটা সাতটার ঘর ছাড়িয়েছে। শেষ পৌষের কুয়াশার চাদর ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে উঁকি দিচ্ছে দিনের প্রথম সূর্যটা। তখনো সেভাবে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠেনি রাজধানী। পালা করে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে লোকজন জড়ো হচ্ছে হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে। কণ্ঠে তাদের ধ্বনিত হচ্ছে ‘গোলাম আযমের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই’ স্লোগান।


জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কয়েক ঘণ্টা আগেই কয়েক হাজার নারী-পুরুষ হাইকোর্টের দক্ষিণ ফটক ও এর আশপাশের এলাকায় মানববন্ধন শুরু করে। বেলা গড়িয়েছে আর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে এসব লোকজনের জমায়েত ক্রমশ বেড়েছে। একসময় মানববন্ধনের সারি শিশু একাডেমী ছাড়িয়ে গেছে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত।
গতকাল বুধবার সকালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগানে গোটা এলাকা ছিল প্রতিবাদমুখর। মানববন্ধন চলাকালে ‘গোলাম আযমের ও রাজাকারের ফাঁসি চাই, দিতে হবে’ বলে মাইকিং করা হয়। ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের গ্রেপ্তার চাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আরও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে, যুদ্ধাপরাধ ও তাদের দোসরদের প্রতিহত কর, বিচার-প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে।’ ‘গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী গোলাম আযমের বিচার করতে হবে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, বন্যেরা বনে সুন্দর, রাজাকার পাকিস্তানে, সব শিক্ষামাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন কর, সারা দেশে বধ্যভূমি শনাক্ত কর, সারা বাংলা ঘেরাও কর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্ব্বিত কর।’
এদিকে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন আনন্দ মিছিল করেছে, সাধারণ মানুষও উল্লাস করেছে।
গতকাল সকালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের মহানগরের বিভিন্ন থানা ইউনিট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মুটকোর্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট কমান্ড, বিটিসিএল প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমের জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তাঁর বিচার হতে হবে। গোলাম আযমকে সাধারণ আসামির মতো বিচার করতে হবে। তাঁকে অযথা কোনো সুবিধা দেওয়া যাবে না।
ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম সফিউল্লাহ বলেন, গোলাম আজমকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁর বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর তাঁর কথায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা আজ দাঁড়িয়েছি গোলাম আযমের গ্রেপ্তারের দাবিতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচারের জন্য। গোলাম আযমের মতো শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীরা বাইরে থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীরা ভয় পাচ্ছেন।’
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর গণহত্যার অন্যতম নায়ক গোলাম আযম গ্রেপ্তার হলেন। তাঁর ছেলে কয়েক দিন আগে মালয়েশিয়ার টিভিতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।
নিরাপত্তা: গতকাল সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হাইকোর্টের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নজরদারি শুরু করেন। সকালে হাইকোর্টের ১ নম্বর ফটক ও মাজারের ফটক দিয়ে সাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গোলাম আযম ট্রাইব্যুনালে ঢোকার সময় ও তাঁকে ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় শিক্ষা ভবনের মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন ও সাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে গোলাম আযমকে বহনকারী প্রিজন গাড়ির আগে-পিছে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় সেটিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.