ইব্রাহিম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র-সাংসদ নুরুন্নবী আসামি নন, সাক্ষী হলেন

ওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীকে (শাওন) বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। তবে এ মামলায় তাঁকে সাক্ষী করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার আবদুল হালিম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।


অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তারের কারণে সাংসদকে অভিযুক্ত করা হয়নি। জানতে চাইলে সাংসদ নুরুন্নবী গতকাল রাতে বলেন, ‘এ মামলা তদন্তে আমি কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি। সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা আমাকে ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাঁরা আরও ৪০-৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আমার নাম বাদ দেওয়ার জন্য আমি কোনো তদবির করিনি।’
অভিযোগপত্রে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন: সাংসদের গাড়িচালক কামাল হোসেন ওরফে কালা, দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলাম মোস্তফা, যে গাড়িতে করে ইব্রাহিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সেই গাড়ির মালিক মাজহারুল ইসলাম, নুর হোসেন ও সোহেল। এঁরা সবাই এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যার আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪ ও ২০১ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সাংসদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ইব্রাহিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা ইসলাম তিন দিন আগে এ প্রতিনিধিকে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। গতকাল যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিবারের পক্ষ থেকে এর আগে বারবার অভিযোগ করা হয়, চাপের মুখে শুরু থেকেই এ মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ইব্রাহিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই খুনের ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে মামলা করা হয়। এরপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার সংবাদ সম্মেলন করে ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাংসদ জড়িত নন বলে দাবি করেন। এর পর থেকেই এ মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠে।
এরপর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদারকি সেলের ৬৮তম বৈঠকে এটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
২০১০ সালের ১৩ আগস্ট সাংসদ নুরুন্নবীর লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে নিহত হন ইব্রাহিম আহমেদ। এরপর তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ওই দিন রাতেই সাংসদের গাড়িচালক কামাল হোসেন ওরফে কালা বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। মামলার তদন্ত নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এ মামলা তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিআইডিকে।
ওই বছরের ১৮ আগস্ট ইব্রাহিমের ছোট ভাই মাসুম আহমেদ বাদী হয়ে সাংসদ নুরুন্নবীসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। তবে আদালত ওই মামলার ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা দেননি।
শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে তদন্তকাজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আসে। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত হয়, ইব্রাহিম খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গাড়িচালক অপমৃত্যুর মামলা সাজিয়েছেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তবে তদন্তের একপর্যায়ে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় এর তদন্তের ভার সিআইডিকে দেওয়া হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির হাতে তদন্তভার আসার পর ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.