পুলিশের ওপর জামায়াতের অতর্কিত হামলা, পিস্তল লুট

রাজধানীতে গতকাল বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় এক টহল পরিদর্শকসহ (পেট্রোল ইন্সপেক্টর) পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। পুলিশ বলেছে, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ওই টহল পরিদর্শকের কোমর থেকে আটটি গুলিসহ একটি পিস্তল লুটে নেন। তাঁকে বহনকারী টহল গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়।


বিকেল পাঁচটার দিকে দৈনিক বাংলার মোড়ের কাছে এ ঘটনা ঘটে। জামায়াতে ইসলামী ঘটনার জন্য উল্টো পুলিশকে দোষারোপ করেছে।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন: মতিঝিল পুলিশ ফাঁড়ির টহল পরিদর্শক আবুল বাশার, মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন, ট্রাফিক-পূর্ব (মতিঝিল) হাবিলদার রমজান আলী, কনস্টেবল মো. সরোয়ার ও টহল গাড়ির চালক ইউনূছ আলী।
পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ কর্মী আকস্মিক মিছিল করে টহল পরিদর্শক আবুল বাশারের ওপর সরাসরি আক্রমণ করেন। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয়।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠান। এর প্রতিবাদে জামায়াত গতকাল দেশব্যাপী ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালনের কর্মসূচি দেয়। তবে এই কর্মসূচির সময় ও স্থান গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শাপলা চত্বরের পশ্চিম পাশ থেকে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েক শ কর্মী ঝটিকা মিছিল শুরু করেন। এর আগেই আশপাশের ফুটপাতে তাঁদের আরও কর্মী পথচারী বেশে অবস্থান নেন। মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছে যেতেই রাস্তার দুই পাশ থেকে আরও এক-দেড় হাজার কর্মী যুক্ত হন। এ সময় সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদেরও সরে যেতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছে পৌঁছালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ‘ধর ধর’ বলে আতঙ্ক ছড়ান। মিছিলটি ফকিরেরপুল সংযোগ সড়কের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় টহল গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ঘ-০২-২১৫১) করে টহল পরিদর্শক বাশার দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা প্রথমে ইটপাটকেল মেরে ওই গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন। পরে বাশারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করতে থাকেন। তিনি দৌড়ে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে যেতে চাইলে তাঁরা তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথি মারেন এবং ইটের টুকরো দিয়ে মাথায় ও চোয়ালে আঘাত করেন। এতে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাতে পড়ে যান। পরে সাংবাদিক ও সাদা পোশাকে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যান। বাশার ‘আমার পিস্তল, আমার পিস্তল’ বলতে বলতে একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এরপর ওই টহল গাড়ির চালক ইউনূছ আলীর ওপর হামলা হয়। তিনি দৌড়ে কোনোমতে রক্ষা পান। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ওই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছাকাছি আসামাত্র কয়েক শ মিছিলকারী আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমার কোমরের বন্ধনীসহ সি জেড পিস্তলটি ছিনিয়ে নেন। পিস্তলে আটটি গুলি ছিল।’
আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে হাসপাতালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সন্ধ্যা ছয়টায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে হাসপাতালে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমের বিচার হবে জেনে জামায়াত-শিবির আজকেও (বৃহস্পতিবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দমনে নতুন কৌশল নেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি অচিরেই উদ্ধার করা হবে।’
পুলিশকে দোষারোপ জামায়াতের: জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সেক্রেটারি নুরুল ইসলামের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ অন্যায়ভাবে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা, লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। দলের চারজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম হামলার কথা অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের রাস্তায়ই দাঁড়াতে দেয় না, গাড়ি ভাঙচুরের সুযোগ পাব কোথায়? এটি জামায়াতের ওপর নতুন করে ‘ক্র্যাক ডাউন’ চালানোর নতুন ফন্দি।’
মামলা: রাতে মতিঝিল থানার অপারেশন কর্মকর্তা ফরমান আলী বাদী হয়ে আটক তিনজনসহ চার-পাঁচ শ জনকে আসামি করে পুলিশের ওপর হামলা ও দ্রুত বিচার আইনে দুটি মামলা করেন।
নতুন কর্মসূচি: গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত। এর মধ্যে আছে গোলাম আযমের মুক্তির জন্য আজ শুক্রবার সারা দেশে দোয়া দিবস এবং ১৫ জানুয়ারি উপজেলা ও থানা পর্যায়ে বিক্ষোভ।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.