কমেছে শিল্পের মেয়াদি ঋণ by ওবায়দুল্লাহ রনি

মে যাচ্ছে শিল্প খাতের মেয়াদি ঋণ। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। তা আগের বছরের একই সময় এবং এর আগের প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় কম। নতুন করে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ না পাওয়া ও ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদের ফলে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নগদ সংকটে থাকায় ঋণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে।


এসব কারণে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমছে। একই সঙ্গে উৎপাদনে যেতে না পারায় শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের হারও বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। বিজিএমইএর এক তথ্যে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগের অভাবে শুধু পোশাক খাতেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে। ওই অর্থের বিনিময়ে কল-কারখানা স্থাপন করা হলেও তা থেকে উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না। ক্যাপটিভ পাওয়ারের কিছু শিল্প চালানো হলেও তাতে খরচ বেশি হওয়ায় সেটিও চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদি বলেন, মেয়াদি ঋণ নিয়ে সাধারণত শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়। তাই মেয়াদি ঋণ কমা মানে বিনিয়োগ কমা। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি নেতিবাচক একটি খবর। তিনি বলেন, প্রধান দুটি কারণে মেয়াদি ঋণ কমছে। প্রথমত, বিদ্যুৎ-গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলোতে উচ্চ সুদ। একই সঙ্গে তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে গিয়ে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিল্প খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মূলধন খাতে বিতরণ হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৪৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতে বিতরণ হয়েছিল ২৫ হাজার ৭৪২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৭ হাজার ৬৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং চলতি মূলধনে দেওয়া হয়েছিল ১৮ হাজার ৬৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে গত প্রান্তিকের তুলনায় এ খাতে প্রায় ৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ কমেছে। এর মধ্যে মেয়াদি ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ১০ এবং চলতি মূলধনে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে শিল্প খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছিল চলতি মূলধন হিসেবে এবং মেয়াদি ঋণ ৭ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে একই সময়ের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মেয়াদি ঋণ কমেছে ৩৬ কোটি টাকা বা দশমিক ৪৮ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.