র ঙ বে র ঙ-নাকের বাহার

প্রাণী দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ। একেকটির একেক বৈশিষ্ট্য। কাজকর্মও আলাদা। গান গাওয়া বা শোনা কিংবা আনন্দোল্লাসের সময় চোখ, ঠোঁট, হাত, পা, চুল সবেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু নাক? শ্বাস-প্রশ্বাস আর গন্ধ নেওয়া ছাড়া এটার বুঝি আর তেমন কোনো ভূমিকা নেই! প্রাথমিকভাবে তা মনে হতেই পারে। তবে প্রাণী দেহের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


একেক প্রাণীর নাক একেক ধরনের। কারও চেপ্টা, কারও বোঁচা, আবার কারও নাক বেশ লম্বা। আচ্ছা, যদি কারও নাক স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় হয়, তাহলে কেমন দেখা যাবে? হয়তো এতক্ষণে নানা আকার-আকৃতি দিয়ে নতুন কোনো প্রাণী বানানোর চেষ্টা করেছেন। ভড়কেও গেছেন হয়তো কেউ কেউ। কারণ, ভাবনায় কিম্ভূতকিমাকার, বিদঘুটে প্রাণী ছাড়া আর কিছুই যেন ধরা দেয় না। যা-ই হোক, আপনারাও মনের মাধুরী মিশিয়ে যেমন খুশি প্রাণীর কল্পনা করুন না কেন, বড় নাকওয়ালা প্রাণীর কিন্তু অভাব নেই পৃথিবীতে। অবশ্য তা খুবই কম। যাদের আছে বা ছিল, তারা কিন্তু নাকের কারণেই বিখ্যাত। চেনা যায় আলাদা করে। ফ্রান্সের বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব দ্বন্দ্বযোদ্ধা সাইরানো দে বারগেরাকের কথাই ধরা যাক। এই ব্যক্তির নাক ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড়। ব্যক্তি মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসম্ভব ভালো। নাটকই তাকে খ্যাতি এনে দেয়। বিখ্যাত করে তোলে। তবে বড় নাকের কারণে তাকে কম কষ্ট করতে হয়নি জীবনে। নাকের কারণেই তাকে নানা ধরনের ভাঁড়ামো চরিত্রে অভিনয় করতে হতো। বৃহৎ নাকটিকে কীভাবে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাও তাকে দেখানোর চেষ্টা করতে হতো! আরও কত যে মজার মজার চরিত্রে অভিনয় করতে হতো, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সাইরানোর জন্ম হয়েছিল ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যুবরণ করেন ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী আরেক বিখ্যাত অভিনেতার নাম এড্রিয়েন ব্রোডি। তিনিও বড় নাকের অধিকারী। কাল্পনিক চলচ্চিত্রগুলোতে নাক দিয়েই তিনি দেখিয়েছেন তার সুনিপুণ অভিনয়।
তবে মারাত্মক রোগে পড়ে সুন্দর নাকটার বিচ্ছিরি দশার কবলে পড়েছিলেন চীনের ফেই জিয়ানজুন। চলি্লশের কোঠায় পা দেওয়া ফেই হঠাৎ নাকের ডগার ওপর লাল কিছু একটা আবিষ্কার করেন। তা ক্রমে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করতে থাকে। দরিদ্র হওয়ার কারণে হাসপাতালেও যেতে পারছিলেন না। কিন্তু নাকটা ফুলে এক বছরের মধ্যে গণ্ডারের নাকের মতো হয়ে যায়। স্থানীয় ডাক্তাররাও এ ব্যাপারে ভালো কোনো পরামর্শ দিতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে ছুটে যান জিলিন প্রদেশের চ্যাংচুন হাসপাতালে। সেখানে সিটিস্ক্যান করা হয়। ছেঁটে ফেলে দেওয়া হয় বাড়তি অংশ। কিন্তু পুরো ফোলা আর নির্মূল করা যায়নি। এখনও ফেইয়ের নাকটি লাগে গণ্ডারের মতো!
এ তো গেল বড় নাকওয়ালা মানুষের কথা। প্রাণীগুলোর মধ্যে বড় নাকের প্রসঙ্গ টানলে প্রথমেই আসে হাতির কথা। স্থলভাগের সবচেয়ে বড় এই প্রাণীটির আছে বিশাল এক শুঁড়। এই শুঁড় দিয়েই একে অপরকে অভিবাদন, আলিঙ্গন, খাদ্য সংগ্রহ, জলপান থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করে থাকে। ঘ্রাণেন্দ্রিয় অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় অনেক দূরের জিনিসও সহজে অনুভব করতে পারে।
স্টার নৌজড মৌল নামে আছে একটি অদ্ভুত প্রাণী। এ প্রাণীটি স্পর্শের মাধ্যমে সহজেই সব অনুভব করার ক্ষমতা রাখে। প্রাণীটির আছে বড় বড় নখরওয়ালা দুটি হাত। মুখের অংশটা দেখতে ঠিক তারার মতো। সেই তারার মাঝেই আছে দুটি চোখ এবং নাক। দেখতে একেবারেই বিচ্ছিরি ধরনের। তবে প্রাণীটির ঘ্রাণেন্দ্রিয় অত্যন্ত তীব্র। এই প্রাণীটি নাকের সাহায্যেই একশ' কুড়ি মিলিসেকেন্ডের ভেতরে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
বানরের নাক আর মানুষের নাকের মধ্যে কি খুব বেশি তফাৎ আছে? মনে হয় না। তবে কিছু প্রজাতির বানর আছে বড় নাকওয়ালা। এ জাতীয় বানর হাতিশুঁড় বানর নামেই পরিচিত। সাধারণ বানর থেকে এর শারীরিক গঠন অনেকটাই আলাদা। যেখানে অন্যান্য প্রাণীর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে, সেখানে হাতিশুঁড় বানরের বৃদ্ধি পায়। আবার অন্য প্রাণীর রক্ত চলাচলের গতির চেয়ে এ প্রাণীটির গতিও অনেক বেশি। মজার ব্যাপার হলো, অন্য প্রাণীগুলোর তুলনায় যে কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুর্গতি শনাক্তকরণে প্রাণীটি বিশাল নাকটাই ব্যবহার করে থাকে।
হ আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.