সিডনিতে স্বপ্নের ডানা মেলছে কিউইরা

দিনশেষে পিটার সিডলের ঘোষণা, 'আমরা যেকোনো টার্গেট তাড়া করে জিততে পারি।' তবে নাটকীয় দ্বিতীয় দিনশেষে দর্শকরা সিডনির আকাশে তাকালেই দেখছেন, কিউই স্বপ্নের ডানা মেলতে শুরু করেছে! স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৫০ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে তাঁদের চেনা উইকেটেই ১৩৬ রানে বেঁধে ফেলা যদি অনুপ্রেরণাদায়ী হয় তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৯ রান তুলে 'লিড'টাকে ১৫৩ রানে নিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড তো স্বপ্ন দেখবেই।
২৬ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষবার টেস্ট জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। ব্রিসবেনে লুটিয়ে পড়া রস টেলরের নিউজিল্যান্ড এক সপ্তাহ পরই ১৯৮৫ সালের পুনরাবৃত্তির ছবি আঁকতে শুরু করবেন_এতটা কেউ ভাবেননি। সিডনির সবুজ উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে পড়ার পর আরেকটি একতরফা ট্রান্স তাসমান লড়াই দেখার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু ক্রিস মার্টিন, ট্রেন্ট বোল্ট, ডগ ব্রেসওয়েলরা যে স্বপ্নতাড়িত একদল মানুষ! স্বপ্নের রথে চাপা পড়ে কেপ টাউনের দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছিল সিডনিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৭ রানে অল আউট হওয়ার বিভীষিকা ভুলতে না ভুলতেই মার্টিন-ব্রেসওয়েলদের তোপে মাত্র ৭৫ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার ৭ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে!
অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক নন, সিডনি টেস্টের প্রথম দুই দিনে অস্ট্রেলিয়ার চালক অনভিজ্ঞ বোলাররা। জেমস প্যাটিনসন আর পিটার সিডল মিলে গতি আর সুইংয়ে ৮ উইকেট নিয়ে ভূপাতিত করেছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। গতকাল এ দুজন আরেকবার দলের হাল ধরেন ব্যাট হাতে। নবম উইকেটে সিডল-প্যাটিনসন ৬৬ রানের জুটি না গড়লে বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দীনতা আরো প্রকাশ্য হয়ে পড়ত। ৫৮ বলে ৩৬ রান করে সিডলই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের সফলতম ব্যাটসম্যান! ফাস্ট বোলার পরিচয়ে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা প্যাটিসনের ১৭ রানের চেয়ে ৫১ বল খেলে ফেলার গুরুত্বটাই অপেক্ষাকৃত বেশি।
তাহলে ক্রিস মার্টিনের নৈপুণ্য? মাত্র ১৫০ রানের পুঁজি নিয়েও প্রথম ইনিংসে দলকে মহাগুরুত্বপূর্ণ 'লিড' পাইয়ে দেওয়ার চেয়ে জন্মদিন উদ্যাপনের ভালো উপায় খুব বেশি নেই। ৩৭ বছরে পা রাখার দিনে বাঁহাতি এ পেসার বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। আগের দিনই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ফিল হিউজকে। কাল স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খাজাকে শুধু ফিরিয়েই দেননি মার্টিন, সাফল্যের পথও দেখিয়েছেন নিজ দলের তরুণ বোলারদের। বোল্ট আর ব্রেসওয়েলের অনুপ্রাণিত বোলিংয়ের সামনে সিডল-প্যাটিনসন জুটির অভাবিত প্রতিরোধ ছাড়া অস্ট্রেলীয় ইনিংসের পুরোটাই ব্যাটিং-ব্যর্থতায় ঢাকা।
স্বাগতিকদের দুর্গতির সেখানেই শেষ নয়। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং-ব্যর্থতা মুছে দারুণ কিছুর চেষ্টায় ব্যস্ত রস টেলর এবং কেন উইলিয়ামসন। ইতিমধ্যে ৬৬ রান তুলে ফেলেছে এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটি। সবুজ রং কিছুটা মলিন হয়ে উইকেটও যেন ব্যাটসম্যানদের দিকে সন্ধির হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় টার্গেট দিয়ে ২৬ বছরের 'ক্ষুধা' নিবৃত্ত করবে নিউজিল্যান্ড_এমন সম্ভাবনাই একটু বেশি এখন। ক্রমাগত ভোল পাল্টে ফেলা উইকেটের কারণে সিডলের 'ঘোষণা'ও অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ক্রিকইনফো

সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড ১৫০ ও ২য় ইনিংস ৪৪ ওভারে ১৩৯/৩ (টেলর ব্যাটিং ৪২, উইলিয়ামসন ব্যাটিং ৩৪)। অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৫১ ওভারে ১৩৬/১০ (ক্লার্ক ২২, সিডল ৩৬, মার্টিন ৩/৪৬, বোল্ট ৩/২৯, ব্রেসওয়েল ৩/২০)।

No comments

Powered by Blogger.