কঙ্গোয় কাবিলা পুনর্নির্বাচিত ফল প্রত্যাখ্যান এতিয়েনের

ঙ্গোয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোসেফ কাবিলা জয়ী হয়েছেন। দেশটির নির্বাচন কমিশন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা করে। কমিশন জানায়, বেসরকারি ফলাফলে কাবিলা প্রায় ৪৯ শতাংশ এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এতিয়েন শিসেকেদি ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের এ ফল প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন এতিয়েন। এ নিয়ে দেশটিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির স্থিতিশীলতার দিকে যাওয়ার চেষ্টা


আবারও বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড্যানিয়েল নগয় মুলুন্দা জানান, বেসরকারি ফলাফলে কাবিলা প্রায় ৪৯ শতাংশ এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এতিয়েন শিসেকেদি ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ফল ঘোষণার পর তিনি উপস্থিত কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এতিয়েন এ ফল প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে কঙ্গোর নতুন নির্বাচিত নেতা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য চারজন প্রার্থীও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একটি পর্যবেক্ষক সংগঠন এ ফলাফলকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছেন নির্বাচনে কিছুটা অনিয়ম ধরা পড়েছে। তবে তা নির্বাচনের ফলকে খুব একটা প্রভাবিত করার মতো নয় বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
আরএফআই রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এতিয়েন বলেন, 'আমি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করছি। এটাকে কঙ্গোর জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থে ক্রোধ সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচনা করছি। এ কারণে আজ থেকে আমি নিজেকে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে করছি।'
এতিয়েন আরো বলেন, 'আমরা নিজেরা হিসাব করে দেখেছি। তাতে আমি ৫৪ শতাংশ ও কাবিলা ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর (কাবিলা) মেয়াদ শেষ। আমিই প্রেসিডেন্ট।' বর্তমান সংকটের মীমাংসায় আন্তর্জাতিক মহল কী কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়, তিনি সে অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান। পরে তিনি তাঁর সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
এদিকে ফল ঘোষণার পর বিরোধী দলের সমর্থকরা রাজধানীর বিভিন্ন অংশে টায়ার জ্বালায় এবং এতিয়েনের দলের স্লোগান 'দ্য পিপল ফার্স্ট' দিতে থাকে। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের শব্দ শোনা গেছে বলে জাতিসংঘের একটি সূত্র জানায়। রাজধানীতে বিরোধী দলের সমর্থকই বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী কিনশাসায় তারা ২০ হাজার সেনা প্রস্তুত রেখেছে। শহরে উত্তেজনা চলছে। স্থানীয় সুশীল সমাজের এক নেতা জানান, কাবিলাকে জয়ী ঘোষণার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বুজ মায়িতে গোলাগুলি হয়। তিনি বলেন, 'আমরা সব এলাকায় গোলাগুলি শুনতে পাচ্ছি। এখনো চলছে।'
এদিকে দেশের অন্যান্য অংশে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘভিত্তিক এক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় দেশটিতে অন্ততপক্ষে ১৮ জন মারা গেছে। যুুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনই স্থানীয়ভাবে আয়োজিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনের আয়োজন করার মধ্য দিয়ে দেশটি কয়েক বছর ধরে চলা সংঘর্ষের অবসান ও স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকে উৎসাহী করছে।
এদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ল্যাম্বার্ট মেন্ডে জানান, এতিয়েনের নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা 'নির্বুদ্ধিতা ও অবৈধ'। এতে সহিংসতার সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনী ফল নিয়ে কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়াতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন শুক্রবার কঙ্গোর জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান। সূত্র : বিবিসি, টেলিগ্রাফ, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.