ঘন কুয়াশা

কস্মিক ঘন কুয়াশায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে নৌ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল লঞ্চ ও ফেরি যোগাযোগ। এরপর কুয়াশা কেটে গেলেও শনিবার রাতে আবার ঘন কুয়াশা নেমে আসে। ফলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় ফেরি যোগাযোগ। ঘন কুয়াশায় বাস চলাচলও ব্যাহত হয়। আমাদের সংবাদদাতারা জানান, কুয়াশায় মাঝনদীতে আটকা পড়ে শত শত নৌযান। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পদ্মা নদীর দুই পাড়ের মহাসড়কে


যানবাহন আটকে সৃষ্টি হয় কয়েক কিলোমিটার যানজট। এদিকে কুয়াশার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় জিয়ানগরে নিহত হয়েছেন চার বাসযাত্রী। বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন ৬০ জন।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন গতকাল সমকালকে জানান, শুক্রবার সবচেয়ে বেশি কুয়াশা ছিল। তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরকম কুয়াশা আরও পড়তে পারে।
বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা পারাবত-১১ লঞ্চটি গতকাল
শনিবার সদরঘাটে এসে পেঁৗছে সকাল ১০টায়। সিডিউল অনুযায়ী ভোর ৫টার মধ্যে এ লঞ্চটির ঢাকায় পেঁৗছার কথা ছিল। লঞ্চের চালক মোস্তফা জানান, হঠাৎ করে কুয়াশা পড়ায় তারা সময়মতো ঢাকা আসতে পারেননি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবি্লউটিএ) ঊর্ধ্বতন উপ-পরিচালক ও বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম সমকালকে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর উদ্দেশে প্রতি রাতে ৫০টির বেশি যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে আসে। সকাল ৫টার মধ্যে লঞ্চগুলো ঢাকায় পেঁৗছে। গতকাল সব লঞ্চই নির্ধারিত সময়ের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর ঢাকায় আসে। কুয়াশায় পথ চলতে না পেরে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটের সব ধরনের ফেরি চলাচল। বিআইডবি্লউটিএর আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফেরিতে যানবাহন পারাপার বন্ধ ছিল।
এরপর শনিবার রাত ১০টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে আবার ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। মাওয়ায় আসার পথে আটকা পড়েন প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।
কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৪ জন : গোপালগঞ্জ/কাশিয়ানী/জিয়ানগর/মিটামইন প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে জিয়ানগর থেকে ঢাকাগামী বনফুল পরিবহন দুর্ঘটনার শিকার হলে চারজন নিহত এবং ৪৫ জন আহত হন। শুক্রবার বিকেলে বনফুল পরিবহনের একটি বাসের চালক গোপালগঞ্জে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া এলাকায় রাত ১১টার দিকে কুয়াশার কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে গাড়িটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই গাড়ির হেলপার জিয়ানগরের বালিপাড়া গ্রামের সোহরাব হোসেন, পাড়েরহাটের মনির হোসেন, পিরোজপুরের অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী ও গোপালগঞ্জের অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী নিহত হন। গুরুতর আহত হন ৪৫ যাত্রী। এদিকে কিশোরগঞ্জের কাটা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ও বালুভর্তি ভলগেটের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন আরও ১৫ জন।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ১১ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ : মানিকগঞ্জ/গোয়ালন্দ প্রতিনিধি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১১ ঘণ্টা ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। দীর্ঘ সময় ফেরিতে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় ৫ কিলোমিটার যানজট। রাত ১১টার দিকে ফেরিতে যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে রাত পৌনে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া থেকে রো-রো ফেরি আমানত শাহ পাঁচটি বাস, ছয়টি ট্রাক ও ১২টি ছোট এবং কেরামত আলী ১০টি ট্রাক ও ১২টি ছোট গাড়ি নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে মাঝনদীতে আটকা পড়ে। পাটুরিয়া ঘাটে শাহজালাল, মতিউর রহমান, কুমারী যানবাহন বোঝাই এবং খানজাহান আলী আনলোড অবস্থায় পন্টুনে নোঙর করা ছিল।
মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে পদ্মায় আটকে পড়ে ১০টি ফেরি : লৌহজং/শিবচর প্রতিনিধি জানান, কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রো-রো, টানা ও কে-টাইপ ফেরিসহ ১০টি ফেরি ১১ ঘণ্টা মাঝনদীতে আটকা পড়ে। ফলে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও মুমূর্ষু রোগীসহ হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় দুর্ভোগের কবলে পড়েন। বিআইডবি্লউটিসির কাওড়াকান্দি ঘাট ইনচার্জ এমএ বাতেন জানান, নদীপথের মার্কিং, বয়া, বিকন বাতি ও সার্চলাইটে গতিপথ নির্ণয় করতে না পারায় উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রো-রো ফেরি ভাষা শহীদ বরকত, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, রানীক্ষেত, রানীগঞ্জ, টাপলো, রামশ্রী, কিশোরী ও কাবেরীসহ ১০টি ফেরি ছোট-বড় তিন শতাধিক যান নিয়ে মাঝনদীর বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে থাকে। একইভাবে শনিবার রাতেও ঘন কুয়াশায় আটকা পড়ে একাধিক ফেরিসহ যানবাহন। বিআইডবি্লউটির মাওয়া অফিসের এজিএম আশিকুজ্জামান জানিয়েছেন, শ্রম ও জনকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানকে নিয়ে কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফেরি ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মা পারি দিতে না পেরে কাছাকাছি শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ী (ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী) ঘাটে ফেরি নোঙর করে মন্ত্রী সেখানে অবস্থান করছেন।
মেঘনায় আটকা পড়ে অর্ধশত লঞ্চ : ভোলা প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীগামী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ শনিবার ভোররাতে চাঁদপুরে মেঘনার বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়ে। রাত ৩টা থেকে মোহনপুর ও ষাটনলের মেঘনায় আটকাপড়া এসব লঞ্চের যাত্রীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর গন্তব্যে পেঁৗছে লঞ্চগুলো। লঞ্চগুলোতে দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। এদিকে ঢাকা থেকে দ্বীপজেলা ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ২০-২৫টি লঞ্চ মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে একইভাবে আটকা পড়ে। ভোলা থেকে ছেড়ে আসা এমভি সম্পদ লঞ্চের মাস্টার আবুল কালাম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় তারা ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসেন। রাত আড়াইটায় চাঁদপুর জেলার মোহনপুরের মেঘনায় এসে লঞ্চটি ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে। একই সময় ওই এলাকায় লালমোহন থেকে আসা এমভি সালাউদ্দিন-১সহ আরও ১০-১২টি লঞ্চ আটকা পড়ে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সকাল ৯টায় আবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে দুপুর ১২টায় ঘাটে পেঁৗছে লঞ্চগুলো।

No comments

Powered by Blogger.