কলকাতার হাসপাতালে আগুন-পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে কোথাও

হাসপাতালে গিয়ে মানুষ সুস্থ হয়, আবার মারাও যায়। তবে সেই মৃত্যু হয় স্বাভাবিক। স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার পরও মানুষ মৃত্যু কামনা করে না। কিন্তু অলঙ্ঘনীয় ঘটনা হিসেবে এই মৃত্যুকে মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর সে ক্ষেত্রে মানুষের করারও কিছু থাকে না। কিন্তু হাসপাতাল যদি নিজেই হয় মৃত্যুর কারণ, তাহলে তা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। কলকাতার ঢাকুরিয়ার অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আমরি) হাসপাতালটি সে রকম মৃত্যুর কারণ


হিসেবে ইতিমধ্যে প্রচারমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। এ অগি্নকাণ্ডে হতাহতদের জন্য আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়টি রচিত হয়েছে গত শুক্রবার ভোররাত ৪টায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক কারণে বেজমেন্টে আগুন লেগে থাকতে পারে। আর বেজমেন্টে কোনো দাহ্য পদার্থ না থাকার কথা থাকলেও সেখানে পুরনো কাগজপত্র, ওষুধপত্র থেকে শুরু করে নানা দ্রব্যসামগ্রী ছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে দরজা-জানালা ছিল বিশেষভাবে তৈরি। একই সঙ্গে সিঁড়িপথও ছিল সরু। এমন অবস্থায় আগুন লাগলে স্বাভাবিক-সুস্থ মানুষের পক্ষেই বের হয়ে আসা কঠিন। আর ওটা হচ্ছে হাসপাতাল, যেখানে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভর্তি হওয়া দুই শতাধিক রোগীর মধ্যে প্রথম দিনই ৮৬ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তিন কর্মীর মৃত্যুসহ যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রথম দিনই ৮৯ জনে। সংগত কারণেই আশঙ্কা থেকে যায়, এই মৃত্যুসংখ্যা শত ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক রোগীও কম নয়।
দুর্বিষহ সেই চিত্র ভারতের প্রচারমাধ্যমে সরাসরিও সম্প্রচার করা হয়েছে। দেখা গেছে, এক রোগী জানালা দিয়ে সাদা কাপড় বের করে দুলিয়ে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য, তাঁকে রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেন কি না। ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালের এক রোগীর এই আহ্বান আমাদের বেশ কিছু বারতা প্রদান করতে পারে। এখান থেকে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের অনেক কিছুই শেখার থাকতে পারে। যদিও আমরা এ ধরনের অগি্নকাণ্ড দেখেও অভ্যস্ত, তার পরও এমন অগি্নকাণ্ডে কিভাবে আত্মরক্ষা করা যায়, কিভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়, আমাদের এখানকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে কিভাবে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, সেখানে অগি্ননির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভূমিকম্প নিরোধ ব্যবস্থা সঠিক আছে কি না, না থাকলে কিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে_সবই আগাম দেখার প্রয়োজন আছে। এই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের সিরাজদিখানের গৌরাঙ্গ মণ্ডল মৃত্যুবরণ করেছেন। আর কোনো গৌরাঙ্গ মণ্ডলের যাতে মৃত্যু না হয়, এমন দুর্ঘটনাও যাতে কোথাও না ঘটে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এত মানুষের মৃত্যু থেকে যাতে আমাদের সেই শিক্ষা হয়। হাসপাতাল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, সে বিষয়টিও আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।

No comments

Powered by Blogger.